শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম দিনে তিন সেঞ্চুরি 

সাদমান

স্পোর্টস রিপোর্টার : গতকাল শুরু হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট লিগ। ঢাকা আর ঢাকার বাইরে চারটি ভেন্যুতে শুরু হয়েছে জাতীয় লিগ। প্রথম দিনেই হয়েছে তিনটি সেঞ্চুরি। রাজশাহীতে তুষার ইমরান, সিলেটে সাদমান ইসলামের পরে বগুড়ায় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আরিফুল হক। জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম দিনে অন্য তিন ভেন্যুতে ছিল বোলারদের দাপট। তিন ম্যাচেই হয়েছে একটি করে সেঞ্চুরি। কিন্তু ফতুল্লায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার ম্যাচে হয়নি কোনো সেঞ্চুরি, দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। আর বল হাতে সবার চেয়ে উজ্জ্বল লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন। লিখনের লেগস্পিনে ভেলকিতে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ২৩৮ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছে ঢাকা বিভাগ। জবাবে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই চট্টগ্রামও। দিন শেষে ২৫ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে গেছেন চট্টগ্রামের দুই ব্যাটসম্যান। ১৬ ওভারে ৬১ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছেন লিখন। টসে হেরে ব্যাট করতে রনি তালুকদার ও সাঈফ হাসানের ব্যাটে শুরুটা ভালোই করেছিল ঢাকা বিভাগ। রনি ৫৯ ও সাইফ করেন ৩৪ রান। তাইবুর পারভেজের ব্যাট থেকে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৩ রানের ইনিংস। জুবায়ের লিখনের স্পিন ভেলকি শুরুর আগে প্রাথমিক তা-ব চালান তরুণ দীর্ঘদেহী অফস্পিনার নাইম হাসান। ঢাকার প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকেই ফেরান তিনি। জুবায়ের লিখনের ঘুর্ণির শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন শুভাগত হোম, তাইবুর পারভেজ, মোহাম্মদ শরীফ, মাহবুবুল ইসলাম অনিক ও নাজমুল ইসলাম অপু। লিখনের ৫ ও নাইমের ৩ বাদে অন্য ২ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। ঢাকার ২৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে চট্টগ্রাম। শাহাদাৎ হোসেন রাজীবের বোলিং তোপে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান ইরফান শুক্কুর ও মুমিনুল হক। দলের বিপদের মুখে পালটা আক্রমণ করেন সাদিকুর রহমান। মাত্র ১৬ বলে ৪ চারের মারে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাসামুল হক ২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন।

বগুড়ায় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আরিফুল হক। আর সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও মাত্র ৮ রানের জন্য তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম। তবে আরিফুল ও নাঈমের ব্যাটে চড়ে প্রথম স্তরের ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে রংপুর। বরিশাল অধিনায়ক কামরুল ইসলাম রাব্বির আমন্ত্রণে টসে হেরে ব্যাট করতে দিন শেষে রংপুরের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩০০ রান। রংপুরের পক্ষে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন ওপেনার জাহিদ জাবেদ। তার ব্যাট থেকে আসে ৬২ রানের ইনিংস। মিম মোসাদ্দেক, মাহমুদুল হোসেন লিমন ও তানভীর হায়দার হতাশ করলে ১০১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। সেখান থেকে ১৯৫ রানের জুটি গড়েন আরিফুল ও নাঈম। আরিফুল তুলে নেন প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। দিনশেষে তিনি অপরাজিত রয়েছেন ১১৭ রান করে। তবে দিনের একদম শেষ ভাগে গিয়ে সোহাগ গাজীর বোলিংয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নাঈম। মাত্র ৮ রানের জন্য বঞ্চিত হন ক্যারিয়ারের ২৪তম প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি থেকে। দিনের বাকি সময়টা সাজেদুলকে নিয়ে কাটিয়ে দেন আরিফুল। বরিশালের পক্ষে দুইটি উইকেট নেন সোহাগ গাজী। একটি করে উইকেট নেন কামরুল হাসান, মনির হোসেন ও সালমান হোসেন।

কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে প্রথম স্তরের ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে প্রথম দিন শেষে চালকের আসনে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। বোলিংয়ে শফিউল-দেলোয়ার, ব্যাটিংয়ে মিজানুর-শান্তদের দাপটে প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিকরাই। দিন শেষে খুলনার করা ২১০ রানের জবাবে মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই ১২২ রান করে ফেলেছেন রাজশাহী। শফিউল ইসলাম প্রথম ইনিংসে এবারের আসরের প্রথম পাঁচ উইকেট নিলে ২১০ রানে থেমে যায় খুলনার ইনিংস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৯তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলের সংগ্রহটা ভদ্রস্থ করেন তুষার ইমরান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১১৭ রান করেন মিজানুর রহমান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দিন শেষের ঠিক আগে দিয়ে তরুণ অফস্পিনিং অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। ৮৬ বলের ইনিংসে ৬ চারের মারে ৪৬ রান করেন তিনি। তবে অপরপ্রান্তে টিকে থাকেন মিজানুর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের দশম ফিফটিতে ৭৪ রান করে দশম ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। তিন নম্বরে নামা জুনায়েদ সিদ্দিকীর সংগ্রহ ১ রান। এর আগে এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান খুলনার বর্ষীয়ান ব্যাটসম্যান তুষার ইমরান। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা খুলনার ইনিংসকে ভদ্রস্থ করার একক কৃতিত্বটাও ৩৪ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানের। রাজশাহীর পেসার শফিউল ইসলাম ও ফরহাদ রেজাদের বোলিং তোপে মাত্র ৫৫ রানেই সাজঘরে ফিরে যায় খুলনার পাঁচ ব্যাটসম্যান। প্রথমে সৌম্য সরকার ও পরে নাহিদুল ইসলামের সাথে জুটি গড়েন তুষার। সৌম্যের সাথে ৪৯ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাঁহাতি তরুণের অবদান মাত্র ১৩ রান, নাহিদুলের সাথে ৮৮ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে বাঁহাতি স্পিনার করেন মাত্র ২৬ রান। পুরো ইনিংস জুড়েই তুষার আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন রাজশাহীর বোলারদের বিপক্ষে। পঞ্চাশতম ওভারে আউট হন দেলওয়ার হোসেনের বোলিংয়ে জহুরুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আউট হওয়ার আগে মাত্র ১৪৪ বলের ইনিংসে ক্যারিয়ারের ২৯তম প্রথম শ্রেণীর শতকে করেন ১০৪ রান। ১৪টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কা হাঁকান তুষার। তিনি সেঞ্চুরি হাঁকালেও খুলনার ইনিংস খুব বেশি বড় হয়নি। শফিউল ইসলাম ৫টি, দেলওয়ার হোসেন ও সানজামুল ইসলাম ২টি করে এবং ফরহাদ রেজা একটি উইকেট নিলে মাত্র ২১০ রানেই অলআউট হয়ে যায় খুলনা।

সিলেটে সেঞ্চুরি করেছেন সাদমান ইসলাম। ক্যারিয়ারের এটা তার ষষ্ঠ ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি। খেলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫৭ রানের ইনিংস। ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার সেরা সেঞ্চুরিতে সিলেট বিভাগের বিপক্ষে প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে ঢাকা মেট্রো। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৩২ রান। মেহরাব হোসেন জুনিয়র ২৮ ও মোহাম্মদ আশরাফুল ১ রান নিয়ে অপরাজিত রয়েছেন। ঘরের মাঠে টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সিলেট। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে যেনো খুশিই হন ঢাকা মেট্রোর দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও সৈকত আলি। উদ্বোধনী জুটিতে এ দুজন মিলে যোগ করেন ১১২ রান। ৫ চারের মারে ৪২ রান করে আউট হন সৈকত। দ্বিতীয় উইকেটেও শামসুর রহমানকে সাথে নিয়ে ঠিক ১১২ রানের জুটি গড়েন সাদমান। এ জুটিতে শামসুরের অবদান ৩৪ রান। ততক্ষণে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার সাদমান। তৃতীয় উইকেটে মার্শাল আইয়্যুবের সাথে ৬২ রানের জুটি গড়েন প্যাভিলিয়েন ফেরেন তিনি। আবু জায়েদ রাহীর বোলিংয়ে এবাদত হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ২৩৮ বলের ইনিংসে ২০ চার ও ২ ছক্কার মারে ১৫৭ রান করেন সাদমান। তার বিদায়ের খানিক পরে নিজের অর্ধশত তুলে নিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মার্শাল। ৮৪ বলে ৩ চারের মারে ৫০ রান করেন তিনি। শেষ বিকেলটা নির্বিঘেœ কাটিয়ে দেন ১৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া মেহরাব ও আশরাফুল। সিলেটের পক্ষে শাহনুর রহমান নেন দুইটি উইকেট। অন্য দুই উইকেট নেন আবু জায়েদ রাহী ও এনামুল হক জুনিয়র।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ