বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বরিশালে খাল খনন কর্মসূচি কৃষি উৎপাদনে আশার আলো

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) এস এম শামীম : ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। আগেকার দিনের সেই প্রবাদ বাক্যের বরিশালের অধিকাংশ খালই এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রবাদটি আজ নিছক হাস্যরসের বিষয়, এমনটাই ধারণা নতুন প্রজন্মের।

জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কৃষিখাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে সরকারি অর্থে বিলীন হয়ে যাওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ খালগুলোকে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন চলতি অর্থ-বছরে জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার মাহিলাড়া, বাটাজোর, বার্থী ও নলচিড়া ইউনিয়নে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। জনগুরুতপূর্ণ খাল খননের কাজ করছেন ফরিদপুরের মের্সাস নুরুজ্জামান সোহেল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এসব অধিকাংশ খাল খনন করার পর ইতোমধ্যে পূর্বের যৌবন ফিরে আসতে শুরু করেছে। সূত্রমতে, এবার শ্রমিক দিয়ে নয়; খাল খননের পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে এস্কেভেটার মেশিন দিয়ে পাঁচ ফুট গভীরে গিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে। ফলে চলতি ইরি-বোরো মওসুমে এর সুফল পেতে শুরু করেছে এতদাঞ্চলের হাজারও কৃষকেরা। পাশাপাশি আধুনিক স্বয়ংক্রিয়যন্ত্র এস্কেভেটারের সাহায্যে খাল খননের পর উত্তোলিত মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সুবিশাল রাস্তা। এর ফলশ্রুতিতে পাল্টে যেতে শুরু করেছে অবহেলিত গ্রামীণ জনপথের জীবনযাত্রা।

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেজহার গ্রাম থেকে বাটাজোর ইউনিয়নের যশুরকাঠী পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের খননকৃত খাল সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, পালরদী নদী থেকে শিকারপুরের সুগন্ধা নদীর মোহনা পর্যন্ত বহমান এ খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন থেকে ঐতিহ্যবাহী এ খালের যৌবন ফিরিয়ে আনার জন্য মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। অবশেষে তার আপ্রাণ চেষ্টায় গত দু’মাস ধরে সরকারি অর্থে এ খাল খননের কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। চলতি ইরি-বোরো মওসুমেই এখানকার কৃষিজীবী কৃষকেরা খাল খননের সুফল পেতে শুরু করেছেন।

মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, হারিয়ে যাওয়া খালের যৌবন ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি রাস্তা নির্মাণ করায় অবহেলিত জনপদের হাজার মানুষের জীবনমান এখন অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তিনি আরো জানান, মাহিলাড়া ইউনিয়নের নির্মাণাধীন ইউনিয়ন পরিষদের (পশ্চিম বেজহার) সম্মুখ থেকে দক্ষিণ মাহিলাড়া পর্যন্ত খালের সৌন্দর্য বর্ধন ও তার পার্শ্বের নবনির্মিত রাস্তায় সবুজ বেষ্টনী রোপণের মাধ্যমে ওই এলাকাকে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। খাল খনন ও সু-বিশাল রাস্তা নির্মাণের শত ভাগ কাজ প্রায় শেষের পথে। মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফিরোজ ফোরকান আহমেদ জানান, প্রভাবশালী কর্তৃক অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত ¯¬ুইসগেট নির্মাণ ও নাব্যতা হ্রাসের কারণে গৌরনদী উপজেলার কয়েক’শ খাল আজ বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব খালে পানি প্রবাহ না থাকায় ইরি-বোরো মওসুমে জমিতে পানি সেচে চাষীদের চরম ভোগান্তি পোহানোর পাশাপাশি ক্রমশই ধ্বংস হচ্ছে দেশের কৃষি ও কৃষক। তিনি আরো জানান, গৌরনদী পৌর এলাকাসহ উপজেলায় খাঞ্জাপুর, বার্থী, চাঁদশী, মাহিলাড়া, নলচিড়া, বাটাজোর ও শরিকল ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বহমান খালগুলো আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব খালের অধিকাংশ এলাকায় প্রভাবশালীরা দখল করে পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণসহ খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। এরই মধ্যে মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বহমান খাল দখল করে নির্মাণাধীন অবৈধ পাকা, আধাপাকা সকল স্থাপনা ভেঙ্গে ইতোমধ্যে খাল খনন করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাগজে কলমে উপজেলায় সর্বমোট খাল ছিলো ১১০টি। বর্তমানে ৬০টি খালের কোন অস্তিত্ব নেই। বাকি খালগুলো বিলীন হয়ে গেছে। যারমধ্যে উপজেলার সাত ইউনিয়নে প্রভাবশালী কর্তৃক দখল হয়েছে ১২টি। অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট নির্মাণে ২০টি এবং নাব্যতা হ্রাসের কারণে ১৮টি খাল বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে, পৌর শহরে বিলীন হয়েছে ১০টি খাল। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী বলেন, কৃষকদের চাষাবাদের কথা চিন্তা করে উপজেলাগুলোর মৃত ও মৃত প্রায় খালগুলো খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন বাংলাদেশকে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী ও অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত করতে কৃষি নির্ভর এ দেশের খাল-বিল-নদী-নালা খনন প্রয়োজন।

এজন্য তিনি সরকারের সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) যুগ্ম-পরিচালক আব্দুর রশিদ পাটোয়ারী জানান, গৌরনদী উপজেলায় শতাধিক খালের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি খাল ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ইরি-বোরো চাষাবাদ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে মাহিলাড়া, বাটাজোর, বার্থী ও নলচিড়া ইউনিয়নের নাব্যতা হারানো তিনটি খাল খনন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, খননকৃত খালগুলোর পানি প্রবাহ সঠিকভাবে ফিরিয়ে আনতে ও শুষ্ক মওসুমে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করে চাষাবাদ করতে বাকি সব খাল-বিল-নদী-নালা খনন করা প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ে জনগুরুত্বপূর্ণ খাল খনন চলছে। বাকী খালগুলো খননের জন্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ