আধুনিক ব্রিটেনে এখনো ১৩ হাজার ক্রীতদাস
ব্রিটেনে ১৩ হাজার ক্রীতদাস রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ব্রিটিশ হোম অফিস। অথচ এর আগে বলা হয়েছিলো ২ হাজার ৭৭৪ জন ক্রীতদাস রয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) রিপোর্টেও এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছিলো।
কিন্তু বর্তমানে আগের হিসেবের চেয়ে ব্রিটেনে প্রায় চারগুণের বেশি ক্রীতদাস থাকার কথা স্বীকার করলো ব্রিটিশ হোম অফিস।
২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো আধুনিক স্লেভারি, ডোমেস্টিক ওয়ার্কার, ফোর্স প্রস্টিটিউশন, ফ্যাক্টরি ও কারখানার শ্রমিকদেরসহ ক্রীতদাস থাকার কথা স্বীকার করা হয়েছিলো।
বর্তমান এই তথ্য প্রকাশের পর হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে আঁতকে উঠেছেন। তিনি এই রিপোর্টকে বলেছেন শকিং(দুঃখের)।
হোম সেক্রেটারি বলছেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক ব্রিটেনে এ রকম ক্রীতদাস চলতে দেয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে মডার্ন স্লেভারি মিনিস্টার কারেন ব্রাডলি বলেন, মানুষ ভুল করেও জানে না আমরা কী করেছি। তারপরেও সবাই জানে আমরা ভুল করছি এবং আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
এ সম্পর্কে গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, টেলিগ্রাফ আর ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড একযোগে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
পার্লামেন্টে মডার্ন স্লেভারি বিল দেশে মানবপাচার ও ক্রীতদাস রোধে ইংল্যান্ড ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে কোর্টকে অধিক ক্ষমতা প্রদান যাতে এসব রোধে এবং ভিক্টিমদের রক্ষা করা যায়।
এ সম্পর্কে থেরেসা মে বলেন, আমরা বিভিন্ন এজেন্সি, আন্তর্জাতিক এনফোর্স এজেন্সিসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের আধুনিক ক্রীতদাস রোধ সংস্থার সঙ্গে মিলে কাজ করছি, যাতে সাধারণ এবং নিরপরাধ লোকদের রক্ষা করা যায়।
হোম অফিসের মুখপাত্র জানালেন, ইউকে বর্ডার এজেন্সি, এয়ারপোর্ট, সি-পোর্টসহ সর্বত্র বিশেষ টিম তারা নিয়োগ করার ব্যবস্থা করছেন। যাতে মানবপাচার ও মানবপাচারকারী ঢুকতে না পারে। ভিক্টিমদের কল্যাণে লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক নিয়ে কাজ করা হবে।
কিন্তু এন্টি স্লেভারি ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর আইডেন ম্যাককুয়াড সরকারি এইসব উদ্যোগ যথেষ্ট কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এর দ্রুত সমাধানে এবং বিভিন্ন কর্ম সংস্থানে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলেছেন।
এনসিএর মতে, বেশির ভাগ ভিক্টিম পোল্যান্ড, রোমানিয়া, আলবেনিয়া ও নাইজেরিয়ার নাগরিক হলেও বহু ব্রিটিশ এডাল্টস(বয়স্ক) এবং চিলড্রেনস(শিশু) ক্রীতদাস রয়েছে।
গত বছর নভেম্বর মাসে ব্রিটেনের গ্রেটার লন্ডনের একটি বিল্ডিং থেকে তিনজন ক্রীতদাস নারীকে অত্যন্ত অসহায়ভাবে প্রায় তিন দশক পর পুলিশ উদ্ধার করার পর পরই মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছিলো যাদের একজন নারী ফ্রিডম চ্যারিটির আনিতা প্রেমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, টেলিভিশন ফুটেজে তাকে দেখানো হয়েছিলো।
এ সম্পর্কে আনিতা প্রেম জানালেন, লন্ডনে এ নিয়ে ব্যাপক সাড়া যেমন পড়েছিলো, তেমনি সমস্যাও হয়েছিলো। ভিক্টিম অন্য দেশের ছিলেন, যার ফলে অন্যদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দরকার ছিলো। তার মতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে সমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত; যাতে সমস্যাটিকে সঠিকভাবে এড্রেস করা যায়।