ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

চট্টগ্রামে কেন্দ্র দখল করে হাতি মার্কায় ‘ভোট উৎসব’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর দক্ষিণ পাহাড়তলি এলাকার অন্তত চারটি ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে সিল মারা হয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রে ফাটানো হয়েছ হাতবোমা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ।

মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর পর অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়ক সংলগ্ন বিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও অলি আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে নেয় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা। 

সেখানে ছিনিয়ে নেওয়া বেশ কিছু ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক মিঠুন চৌধুরী।

এসব ব্যালটে হাতি মার্কায় সিল দেওয়া ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থক আ জ ম নাছির উদ্দিন ওই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে দক্ষিণ পাহাড়তলী থানা এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেয়াবাদ সিটি করপোরেশন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সোয়া ১১টার দিকে পাহাড়তলীর ফতেয়াবাদ কলেজ কেন্দ্রেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়।
১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর লোকজনও এ সময় কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে বিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের বাইরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আবুল হাশেম জানান।

এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের ছয়টি বুথের মধ্যে ১ নম্বর ও ২ নম্বর বুথ থেকে বেশকিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের কোনো এজেন্ট সেখানে ছিলেন না।

১ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, “এ বুথ থেকে দুর্বৃত্তরা স্বাক্ষর-সিল ছাড়া ৫৩টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”
তবে ২ নম্বর বুথ থেকে ৪২টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার পর ৪/৫টি ব্যালটে হাতি প্রতীকে সিল মেরে ‘ফেরত দিয়ে গেছে’ বলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মমতাজ হোসেন জানান।

এই অবস্থার মধ্যে সকাল ১০টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট নূরে আলম ভুইয়া কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ‘অভিযোগ করেননি’।পাঁচ মিনিট পর তিনি কেন্দ্র ছেড়ে যান।
অন্যদিকে অলি আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ফজলুল কাদের জানান, তার কেন্দ্রে দুই হাজার ৫১০ ভোটের মধ্যে দেড় হাজার ভোট সকাল ১০টার মধ্যে বাক্সে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ওই কেন্দ্র ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রে প্রবেশের সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রতিবেদক হাতি প্রতীকের একটি মিছিল ওই এলাকা থেকে বের হতে দেখেন।

কেন্দ্রসংলগ্ন শহীদ আজমল হোসেন লেনের বাসিন্দা বিএনপি সমর্থক এসএম ইসমাইল বাবু অভিযোগ বলেন, “আমরা নিজেদের ভোট দিতে পারিনি। সকাল থেকে সশস্ত্র লোকজন কেন্দ্র দখল করে হাতি প্রতীকের পক্ষে ভোট উৎসব করেছে।”

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা যা দেখতে পাচ্ছেন আমরাও তা দেখতে পাচ্ছি। এখানে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।”
সকাল সাড়ে ১০টার সময় কেন কেন্দ্রে ভোটার নেই- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে যারা আছেন তারা ভাল বলতে পারবেন।”

বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফতেয়াবাদ সিটি করপোরেশন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলে নিয়ে ছয়টি বুথে হাতি প্রতীকে সিল মারতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন।

সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর কেন্দ্রে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবু সাঈদ ‘জীবনের নিরাপত্তা বজায় রেখে’ ভোট গ্রহণ করতে সহকর্মীদের অনুরাধ জানান।

ওই কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথের ৫০১ থেকে ৫৩২ পর্যন্ত ব্যালট পেপারগুলোতে ভোটারের টিপসই ও প্রিসাইডিং অফিসারের সই ছাড়াই হাতি প্রতীকে সিল মারা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে দক্ষিণ পাহাড়তলীর ফতেয়াবাদ ডিগ্রি কলেজের ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয় হাতি প্রতীকের সমর্থকেরা। এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের উপর চড়াও হয় তারা।

কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন দেখা গেলেও তারা কেউ ভোট দিতে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও এসময় নিস্ক্রিয় দেখা যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ