ঢাকা, বৃহস্পতিবার 28 March 2024, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

‘মোবাইল ফোনের সব সিমকার্ডই পুনঃনিবন্ধন করতে হবে’

দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব সিমকার্ড পুনঃনিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিমকার্ড নিবন্ধন করা না হলে গ্রাহকদের ওইসব সিম বন্ধ করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আজ মঙ্গলবার বিটিআরসিকে চিঠি পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

বিটিআরসিকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, “অপারেটরদের ক্ষুদে বার্তা দিয়ে গ্রাহকের কাছে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে আপনার নিবন্ধনকৃত সিম বা অনিবিন্ধনকৃত সিম ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় নিবন্ধন করুন। নতুবা তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

সব গ্রাহকেরই সিমকার্ড নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে বলে জানিয়ে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আজ গণমাধ্যমকে বলেন- বিটিআরসিকে নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো চিঠিতে তিনি গতকাল সোমবারই স্বাক্ষর করেন।

গত রোববার ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বৈঠকে সিম নিবন্ধনের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিনই, গতকাল সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, সিম নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই যেসব গ্রাহকের নিবন্ধন নেই বা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের আবার নিবন্ধন করতে হবে। সবাইকে নয়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যানের এ মন্তব্যের পর সৃষ্ট বিভ্রান্তির প্রেক্ষাপটে প্রতিমন্ত্রী আজ তাঁর নির্দেশনার কথা জানান। তারানা হালিম বলেন, ‘বিটিআরসির চেয়ারম্যান নিজেও রোববারের বৈঠকে ছিলেন এবং সিদ্ধান্তটি তাঁর সামনেই হয়েছে। এখন এ নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যার কিছু নেই।’

সব সিমকার্ড নতুন করে নিবন্ধনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক গ্রাহক আগে নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেসব নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করা হয়নি। তাই সবাইকে নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে। নতুন করে নিবন্ধন ও যাচাইয়ের মাধ্যমে তথ্য যদি সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে কোনটি সঠিক নিবন্ধন, আর কোনটি ভুল, তা নিয়ে পুরোনো জটিলতা থেকেই যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার সময় মুঠোফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপনেও সিমকার্ড নিবন্ধন-সংক্রান্ত বার্তা প্রচার বাধ্যতামূলক করা হবে। যেমন সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতি-সম্পর্কিত সতর্কবার্তা থাকে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমেও এ ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রচার চালানো হবে। স্নোগান হিসেবে বলা থাকবে “অনিবন্ধিত সিম ব্যবহারে বিপদ আপনার জন্য, ক্ষতিকর দেশের জন্য”।

অনিবন্ধিত সিমকার্ড ব্যবহার করে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলের পাশাপাশি অনেক অপরাধ ঘটে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছে। এ ছাড়া অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানও এসব সিম ব্যবহার করে পরিচালনা করা হয়। একাধিকবার নির্দেশনা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বিটিআরসি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব মুঠোফোন গ্রাহককে আবারও নির্ধারিত ফরমে নিবন্ধন করতে হবে। প্রতিটি সিমকার্ড যথাযথ নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম বা ফাঁকির সুযোগ দেওয়া হবে না। সে জন্য বিশেষভাবে তদারক করা হবে। গ্রাহকদের দেওয়া তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে মুঠোফোন অপারেটরদের প্রবেশের সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে।

পাশাপাশি সিমকার্ডের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরও তালিকা করা হবে। মুঠোফোন অপারেটরদের কাছ থেকে এ তালিকা নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী তাঁরা নিবন্ধিত হবেন। নতুন সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহককে অবশ্যই যে বিক্রেতার কাছ থেকে সিমকার্ড কিনেছেন, এর প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। নতুন গ্রাহকের সিমকার্ডের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিক্রেতার নাম-ঠিকানাও তথ্য হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে মুঠোফোন অপারেটরদের।

বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে মুঠোফোনের গ্রাহকসংখ্যা ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার। মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর (গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইউনিক বা একক মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭০ লাখ। এখানে এক ব্যক্তির একাধিক সিমকার্ড থাকলেও তাঁকে একক ব্যবহারকারী হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে দেশের মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৭০ শতাংশ গ্রাহকের সিমের নিবন্ধন যথাযথ নয়।
-শীর্ষনিউজ ডট কম

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ