বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার শিক্ষিকা গ্রেফতার

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা, ৫ ফেব্রুয়ারি : বরগুনার আমতলীর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে বসবাসরত আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তানিয়ার বাসায় সোমবার সন্ধ্যায় কারিমা (১০) নামে এক গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিক্ষিকার শিশু সন্তানকে কোলে না নেয়ার অপরাধে কারিমাকে স্টিলের স্কেল ও রুটি তৈরির ব্যালন দিয়ে নির্যাতন করে দুইদিন ধরে ঘরে আটকে রাখে।
সোমবার সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে পালিয়ে এসে এক কাউন্সিলরের বাসায় আশ্রয় নিলে বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি জানাজানি হয়। নির্যাতনের অভিযোগে ওই শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার সকালে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আমতলী থানা পুলিশ।
নির্যাতিতা কারিমা জানায়, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আমতলী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে বসবাসরত আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষীকা তানিয়ার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয়। কারিমার বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামে। বাবা মজিদ হাওলাদার ২ বছর আগে মারা যায়। মা তহমিনা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন কোথায় আছেন- কারিমা তা জানে না।
স্কুল শিক্ষিকা তানিয়ার বাবার বাড়িও ওই একই গ্রামে হওয়ায় তানিয়ার মা দুই মাস আগে কারিমাকে মেয়ের বাসায় পেটে-ভাতে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ করে। সোমবার সন্ধ্যায় গৃহকর্তা তানিয়ার ২ বছরের মেয়ে মুন কান্নাকাটি করে। এসময় মেয়েটিকে কোলে না নেয়ায় শিক্ষিকা তানিয়া কারিমাকে স্টিলের স্কেল এবং রুটি তৈরির ব্যালন দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। কারিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডান পায়ের গোড়ালির উপরে স্টিলের স্কেলের আঘাতে কেটে যায় এবং বাম চোখের নিচে মারের আঘাতে কালছে দাগ হয়ে আছে। পিঠে মার ধরের কারণে প্রচণ্ড ব্যথা জমে আছে। মারধরের পর কারিমাকে স্কুল শিক্ষক তানিয়া ঘরের একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারিমা ওই বাসা থেকে পালিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেনের বাসায় আশ্রয় নেয়। কারিমা জানায়, কোন কামে ভুল অইলেই মাড্যামে মোরে খালি মাইর ধইর করত। কাউন্সিলর ফরহাদের মা হাফেজা বেগম বলেন, মেয়েটি খুব অসুস্থ ছিল আমি ওকে সেবাশুশ্রুসা করে সুস্থ করে তুলি। কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, একটি অসহায় মেয়ের ওপর যেভাবে নির্যাতন করেছে এটা ঠিক হয়নি।
অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষিকা তানিয়া বেগমকে বুধবার রাতে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তানিয়া জানান, গৃহকর্মী কারিমাকে আমি কোনো নির্যাতন করিনি। কারিমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরের মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়ে যাওয়ায় ব্যথা পেয়েছে। তানিয়ার স্বামী বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন। আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলকচন্দ্র রায় জানান, গৃহকর্মী কারিমাকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষিকা তানিয়াকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। আমরা নির্যাতিত ওই শিশুকে রাতেই উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছি। এখন সে আমাদের হেফাজতে আছে। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে রাতে কারিমার মামা পনু মিয়া বাদী হয়ে আমতলী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ওই শিক্ষিকাকে আসামি করা হয়েছে। আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তানিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ