ঢাকা, বৃহস্পতিবার 28 March 2024, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

পোনা সংকটে সাতক্ষীরার গলদা চাষ ও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা

রফিকুল ইসলাম, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরায় মৌসুমের শুরুতে গলদা চিংড়ি পোনা সংকটে পড়েছে চাষীরা। নদীতে পোনা আহরণ নিষিদ্ধের পাশাপাশি জেলার সবকটি হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকটোর কারণ বলে জানান চাষীরা। ফলে চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানান গলদা চাষি।অন্যদিকে বিকল্প ব্যাবস্থা গ্রহণ না করা হলে শিঘ্রই উৎপাদন  বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালি গ্রামের গলদা চাষী আবুল কালাম জানান, চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা পরিমাণ জমির গলদা ঘের করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পোনা চাহিদা রয়েছে তার। কিন্তু অন্যবছরে নদী থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারলে ও এবার নদীর একটি পোনাও সংগ্রহ করতে পারেন নি। তাই বাধ্য হয়ে ভারতীয় পোনা সংগ্রহ করে তার ঘেরে ছেড়েছেন। তার পরও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তিনি। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন এই গলদা চাষি।

একই উপজেলার নকীপুর গ্রামের গলদা চাষি ফজলুর রহমান জানান, গত দেড় শতক ধরে অন্যান্য মাছের পাশাপাশি গলদা চাষ করে আসচেন। চলতি মৌসুমে ও ৪৫ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে গলদা চাষ করছেন এবার তার দুই থেকে আড়াই লাখ পোনা চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এ পর্যন্ত ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার পোনা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। ফলে পোনা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসূমে সাতক্ষীরা জেলার ৭টি উপজেলাতে ১১ হাজার ৬৬২ টি রেজিস্ট্রিশন কৃত ঘেরে গলতা চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। যার পোনা চাহিদা রয়েছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ। চাহিদার তুলনায় এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে জেলার ৭টি উপজেলাতে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে এবার উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ মেট্রিকটন। বাংলাদেশ গলদা চিংড়ি পোনা উৎপাদন কারী হ্যাচারী মালিক সমিতির সভাপতি শেখ শফি আহমেদ জানান, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গলদা চিংড়ি এখন উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদাও ব্যাপক। তাছাড়া বাগদা চিংড়ির মতো ভাইরাসের আক্রমন নেই। ফলে সাতক্ষীরার গলদা চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে নিতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল অদুদ জানান, রপ্তানিজাত চিংড়ি হিসেবে বাগদার তুলনায় গলদার প্রতি ঝুকছেন সাতক্ষীরা জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের মৎস্য চাষিরা। কারণ এটি মিষ্টি পানির পুকুর, ডোবা ও বিলসহ স্বাদু পানিতে উ’পাদন যোগ্য। তাছাড়া তুলনামূলক গলদার রোগবালাই কম হয়। ফলে জেলাতে গলদা চাষের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। কিন্তু পোনা সংকটের কারণে এখানকার গলদা চাষিরা খুবই বিপাকে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর আগেও জেলায় বেসরকারিভাবে ১০টা গলদা হ্যাচারি ছিল। কিন্তু নানা কারনে সবকটি হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে নদী খালে গলদা পোনা আহরন নিষিদ্ধ এবং ভারতীয় পোনা প্রবেশ করতে না দেয়া জেলার গলদা চাষিরা পড়েছে মহা বিপাকে। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আগামীতে সাতক্ষীরা থেকে গলদা চাষ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ