সরবরাহের অজুহাতে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম
স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে মসলার বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকলেও সরবরাহের অজুহাতে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। সরকারের মনিটরিং না থাকায় নিজেদের ইচ্ছা মত দাম বাড়াচ্ছে মুনাফা লোভী ব্যবসায়রা।
জানা গেছে,পাইকারি বাজারে ভারতীয় হলুদের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায় এবং খুচরা বাজারে ভারতীয় এ হলুদ কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়। ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে বেশিরভাগ মসলার দাম। পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচির দাম বেড়েছে কেজিতে একশো টাকার বেশি। লবঙ্গ ও দারুচিনির দামও চড়া। তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি মসলার দাম বাড়েনি।
লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ। মাংস রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এসব মসলার চাহিদা বেশি বাড়ে কোরবানির ঈদে। আর এই ঈদ না আসতেই বাজারে হুট করে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। বেশি চড়া এলাচের বাজার। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে একশো টাকার বেশি বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪শ’ টাকায়।
ভোক্তাদের অভিযোগ চাহিদা সরবরাহ সংকটসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়াচ্ছেন। এক দোকানের সঙ্গে অন্য দোকানের পণ্যের দামে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের ইচ্ছা মত দাম নিচ্ছে দোকানিরা। এতে করে হয়রানির শিকার হচ্ছে ক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক সপ্তাহে আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৮ থেকে ৩০ টাকা। দারুচিনি ২০ টাকা ও জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। দাম বাড়ার তথ্য মানতে রাজি নন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,মসলার দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। মসলার আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। মসলার প্রচুর মজুদও রয়েছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি ভারতীয় এলাচ (মান ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ভারতীয় জিরার (প্রতি কেজি) দাম বাজার ভেদে বেড়েছে প্রায় ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৪০ টাকায়। ইরানি জিরা ৫০ টাকা বেড়ে ৩৮০ টাকায় ও টার্কিশ জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেজি প্রতি সরিষা ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, জায়ফল খোসা ও বিচি ছাড়া এক হাজার টাকা, খোসা ও বিচিসহ ৮০০ টাকা, দারুচিনি ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়, গোলমরিচ (কালো) ৮৫০ টাকা ও গোলমরিচ (সাদা) বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৮০ টাকায়। তবে তেজপাতার দাম ১৪০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ি কাঁচা বাজারের মসলা ব্যবসায়ী খন্দকার আবুল হোসেন জানান, মসলার পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তবে খুচরা বাজারে ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
একই বাজারে মসলা কিনতে আসা জালাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, সারা বছর মসলার দাম স্থিতিশীল থাকলেও কোরবানির ঈদ এলেই তা বেড়ে যায়। কারণ কোরবানির মাংসের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো মসলা।
এদিকে রাজধানীর মুদিবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। যা গত এক সপ্তাহ আগে আদা বিক্রি হতো ৭০ টাকায়। রসুনের (দেশি) দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়, আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকা এবং মানভেদে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৩৮ ও ভারতীয় ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলের দাম রয়েছে আগের মতোই।
এছাড়াও জায়ফল,যত্রিক,আলুবোখারার দামও বেড়েছে কেজি প্রতি ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত। কি কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে তা সঠিক কারণ বলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন,চাহিদা বেশি আর সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা বেশি। আমরা খুচরা দোকানি। আমাদের কিছু করার নেই। বেশি দামে কিনেছি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
বেগম বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বেলাল হোসাইন দৈনিক সংগ্রামকে বলেন,সিন্ডিকেট থাকলে উপরে আছে। আমাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ঈদ এলে মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। আর এতে সরবরাহের কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। এতে করে প্রতি বছরই কুরবানির ঈদ এলে মসলার দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এটা সাময়িক। তিনি বলেন সারা বছর যে পরিমান মসলা লাগে কুরবানিতেই তার ৭০ ভাগ মসলা লাগে। বাড়তি দাম ঈদের পরে আর থাকে না।
তিনি আরও বলেন,মানুষ কিন্তু কুরবানির সব মাংস এক দিন রান্না করে না। কিন্তু মসলা তাহলে এক দিনে কেন কিনেন। এতে করে চাহিদা আর সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। আর কারণেই দাম কিছুটা বেড়ে থাকে। দাম বাড়ার আর কোন কারণ রয়েছে বলে আমার জানা নেই।