বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বগুড়ার শেরপুরে ১০ টাকা কেজি চাল পাচ্ছেন না তালিকাভুক্তরা

বগুড়া অফিস ও শেরপুর সংবাদদাতা : বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের জিয়ারুন বিবি দুই বছর আগে মারা যান। অথচ তার নামেও দশ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করা হয়। মৃত ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোন সদস্য এই চাল পাননি। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট এই চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। একইভাবে গাড়ীদহ ইউনিয়নেও পাঁচজন মৃত ব্যক্তির নামে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু মৃত ব্যক্তি নন, হতদরিদ্রদের নামে দেয়া রেশন কার্ড নয়ছয় করে ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উত্তোলর করছেন স্বল্পমূল্যের এই চাল। ফলে দুইদিনের মধ্যেই অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় বিক্রি শেষ হয়ে গেছে হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া চলতি মাসের ৩৩৬ মেট্রিকটন চাল। পরে উত্তোলন করা ওইসব চাল কালোবাজারে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা লুটেপুটে খাচ্ছেন ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। উপজেলার শাহবন্দেগী, গাড়ীদহ, ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বললে হতদরিদ্রদের জন্য নেয়া সরকারের খাদ্য বান্ধব এই কর্মসূচির ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। এদিকে প্রকৃত হতদরিদ্র রেশন কার্ডধারীরা চাল না পাওয়ায় তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই চাল বঞ্চিতরা স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভসহ প্রতিবাদ করছেন। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙেনি। এমনকি কালোবাজারি ও হতদরিদ্রদের চাল আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১০ইউনিয়নে এই চাল বিক্রির জন্য মোট ২০জন ডিলার রয়েছে। সপ্তাহের তিনদিন শুক্রবার, শনি ও মঙ্গলবার এই চাল বিক্রি করবেন তারা। বিভিন্ন গ্রামের তালিকাভুক্ত হতদরিদ্র ১২হাজার পরিবার দশ টাকা কেজি দরে একেকজন ব্যক্তি মোট ত্রিশ কেজি চাল কিনতে পারবেন। সে মোতাবেক ডিলারদেরকে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩৬ মেট্রিকটন চাল দেয়া হয় বলে সূত্রটি জানায়। কিন্তু এই চাল বিক্রিকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আশ্রয় নেয়া হয়। তালিকাভুক্ত প্রকৃত হতদরিদ্রদের না জানিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের কার্ড দিয়ে স্বল্পমূল্যের চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শেরুয়া গ্রামের জাহেদা বেগম, কহিনুর খাতুন, মোর্শেদা বিবি, ফুলেরা বেগম, রফিকুল ইসলাম, রেজাউল করিম, সাধুবাড়ী গ্রামের জয়নব বেওয়া, চায়না খাতুনসহ একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, “তালিকায় আমাদের নাম রয়েছে। তাই ডিলারের দোকানে চাল নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডিলাররা আমাদের বলে চাল দেয়া শেষ। এছাড়া তোমরা তো চাল উঠিয়ে নিয়ে গেছ। আবার এখানে কি জন্য এসেছ। আমরা চাল পাইনি বলে জানালে, তারা আমাদের বলে খাতায় তো তোমাদের টিপসই আছে।” এসব বলে ডিলাররা চাল না দিয়েই আমাদের তাড়িয়ে দেয়। এই ইউনিয়নের একজন চৌকশ কর্তার সহযোগিতায় সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কতিপয় মেম্বার হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া এই চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে এসব ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। তবে ওই ইউনিয়নের সচিব ইকবাল হোসেন দুলাল বলেন, ২০১১ সালের তালিকা অনুযায়ী এই চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাই দু-একটি সমস্যা থাকতেই পারে। তবে আগামীতে সেটি হবে না। কারণ তালিকা যাচাই-বাছাই করেই এই চাল দেয়া হবে।
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল আমিন মন্ডল জানান, তিনিও এই ধরণের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। তাই বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সরোয়ার জাহান কার্ডধারী হতদরিদ্রদের ১০টাকা কেজির চাল শাহবন্দেগী, গাড়ীদহ ও ভবানীপুর ইউনিয়নে কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে অভিযোগে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ইতোমধ্যেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ