শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজনীতির গোড়ায় গলদ

সমাজকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষের সমাজে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সমাজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যাদের অবদান রাখার কথা অনেক সময় এক্ষেত্রে তারাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ কারণেই হয়তো আমাদের সমাজে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাকক্ষে হামলার ঘটনা ঘটে যায়। গত ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। ওইদিন বেলা ১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
৩১ অক্টোবরের প্রথম আলো পত্রিকায় মুদ্রিত খবরে বলা হয়, ৩০ অক্টোবর উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা চলাকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী ম ম আমজাদ হোসেনের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হকের বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকরা এতে জড়িয়ে পড়েন। এই অবস্থায় ইউএনও সভা মুলতবি করে নিজের কক্ষে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই সংসদ সদস্যের একদল সমর্থক সভাকক্ষে হাজির হন। তারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ মারাত্মক রূপ নেয়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হকের মাথায় কেটলি দিয়ে আঘাত করা হলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার এমন করুণ পরিণতি দেখে জনগণ আশাবাদী হবে কেমন করে?
যে কোনো সমাজে আইন-শৃঙ্খলা কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। এই কমিটির যোগ্যতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনের সক্ষমতার উপর সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় যে চিত্র লক্ষ্য করা গেল, তাতে স্বয়ং আইন-শৃঙ্খলা কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমপি ও চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে সভাকক্ষে লক্ষ্য করা গেল সন্ত্রাসের ঘটনা। আর ইউএনও অসহায়ের মত চলে গেলেন আপন কক্ষে। সন্ত্রাস ও অসহায়ত্বের এমন সংস্কৃতি দিয়ে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কেমন করে? আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিরোধী দলের সাথে নয়, বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেরাই নিজেদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন এবং এসব ঘটনা এতটাই নেতিবাচক যে, এ নিয়ে আলোচনা করতেও অনেকের রুচিতে বাধে। আমরা একথা জানি যে, একটি সমাজের সব মানুষ একরকম করে ভাবে না; দলের মধ্যেও থাকে চিন্তা-চেতনার পার্থক্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মতবৈচিত্র্য বা মতপার্থক্য নিয়েও যে একটি সমাজে বা সংগঠনে শান্তিপূর্ণভাবে থাকা যায় এবং কাজও করা যায়, এতদিনেও আমরা তা শিখতে পারলাম না কেন? এখানেই চলে আসে রাজনীতির গুণগত মান ও নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রসঙ্গ। আমরা দেখেছি, যে দেশের নেতারা জ্ঞান, সততা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের সমন্বয়ে রাজনীতিতে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তারাই সক্ষম হয়েছেন দেশকে শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে। আমাদের দেশে এসব বিষয়ে দৈন্য রয়েছে। ব্লেমগেমের বর্তমান সময়ে রাজনীতিবিদরা এই বিষয়গুলো স্বীকার করতে চান না। তবে জনগণ মনে করে, এই বিষয়গুলো স্বীকার করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দ্রুত নিজেদের সংশোধন করে নতুন অভিযাত্রা শুরু করতে পারলে দেশ কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে যেতে সক্ষম হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ