বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ফাহিমের ভালো লাগা

আখতার হামিদ খান : ছোট, খুব ছোট একটি ছেলে। বয়েস নয়-দশ। নাম তার ফাহিম। সে খুব ভাল ছেলে। স্কুলে সে ক্লাস ফাইভে পড়ে। তার ছোট মনটা ফুলের মত কোমল ও বিনয়ী। সে গরীব-দুঃখীদের দেখলে মনে কষ্ট পায়। বয়েস চার বছরের সময়ও কোন ভিক্ষুক বাসার গেটে এসে হাঁক দিলে সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে ভিক্ষে দিত। কেউ তার আগে ভিক্ষে দিতে পারত না। সে বলতো আমিই দেবো। তার ছোট আপু রিপা যদি কোন দিন দিয়ে দিত, দেখা মাত্র সে অভিমানে কাঁদতে শুরু করতো। এখনও স্কুলে যেতে আম্মা টিফিনের জন্য টিফিন বাটিতে বিছু দিলে তা সে প্রায়ই গরীব দুঃখীদের দিয়ে দেয়। এক দিন সে তার বড়দা সহ শিশু পার্কে গেল। সেখানে অনেক মজার মজার খেলা। বড়দা তার জন্য ছ’টি টিকেট নিলো। ফাহিমকে তখন একটি ছেলে বললো ভাইয়া আমাকে একটা টিকেট দেবেন আমি ঘোড়ায় চড়মু। ফাহিম তার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সে এক ফুট-ফুটে বালক কিন্তু মুখে হাসি নেই পরনে ছেঁড়া জামা। ফাহিম ভাবলো যে আমি আনন্দ ফুর্তি করবো, আর আমার মত একটি ছেলে মুখ ভার করে থাকবে, তা হয় না। সে তাকে দু’টো টিকেট দিতে চাইল। কিন্তু বড়দা তাকে একটিও দিল না। এত সব কিছু দেখার পরও ফাহিমের মুখে হাসি ফুটছে না। শুধুমাত্র ঐ ছেলেটির মুখে হাসি ফুটাতে পারেনি বলে।
মিশুক করে ক্যান্টনমেন্ট আসার পর বড়দা একটা রিকশা নিলো। রিকশাটি বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। রিকশা থেকে নেমে ফাহিম অজু সেরে আসল।
সন্ধ্যা এখন। আযানের অপেক্ষায় আছে ফাহিম। সুমধুর সুরে ভেসে এলো আযানের ধ্বনি। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ সেরে এলো সে। বাসায় ঢুকতেই বারান্দায় অচেনা এক ছেলে দেখতে পেল। বয়েস বার কি তের। শরীরের হাড় দেখা যাচ্ছে, মনে হয় হাড়গুলো গোনা যাবে। পরনে ছেঁড়া গেঞ্জি ও লুঙ্গি। এই ছেলে কে? কিছু চায় নাকি? তাই সে জিজ্ঞেস করল:
: এই তোর নাম কি?
: কাঁপতে কাঁপতে বললো, মমতাজ।
: মমতাজ? বাড়ি কোথায়?
: বাড়ি নেই।
: থাকিস কোথায়?
: রাস্তা ঘাটে, স্টেশনে বা বিল্ডিংয়ের
সিঁড়ির নীচে।
: এখানে?
: আজ কয়দিন দইরা উপোস, যদি পারেন দুইডা ভাত........
ফাহিমের কচি মন কেঁদে উঠলো। তাকে তার পড়ার রুমে নিয়ে গেল। টেবিলের উপর রাখা ভাত পেটপুরে মমতাজকে খাওয়ালো। তার দু’টো জামা থেকে একটি তাকে দিয়ে দিল। তার সঞ্চয় থেকে মমতাজকে বিশটা টাকাও দিল। মমতাজ খুশিতে আটখান হয়ে ফাহিমকে দোয়া করতে করতে চলে গেল।
এখন ফাহিম খুবই খুশি। আকাশেল চাঁদ হাতে পাওয়ার চেয়েও বেশী আনন্দ পেয়েছে সে। তার আম্মা এ সব শুনে ফাহিমকে লক্ষী ছেলে বলে আদর করল। এবং বললো জানো ফাহিম আমাদের নবী (সাঃ) ও এরকম মানুষদের ভালোবাসতেন। ফাহিম ভাবতে থাকে, “আহ্! যদি জগতের সব দুঃখীদের মুখে এমন হাসি ফোটাতে পারতাম।”

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ