শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ওপর ঢালাওভাবে জঙ্গিবাদের তকমা ॥ শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখি হওয়ার শংকা

সংগ্রাম রিপোর্ট : দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘জঙ্গী’ সম্পৃক্ততায় নজরদারি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখিতা যখন কমছিল, তখনই দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এসব খবর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে, এগুলোকে সন্ত্রাসের আতুরঘর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

একটা সময় এ দেশের শিক্ষার্থীরা পাশ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছুটে যেতো। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মানসম্মত মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের বিকাশের কারণে বিদেশমুখিতা কমে আসে। কিন্তু দু’একজন ছাত্রের অপরাধের কারণে ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ দাঁড় করানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে দ্বিধান্বিত হবে শিক্ষার্থীরা। আতংকের কারণে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে বিকল্প প্রতিষ্ঠান খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করবেন। বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা আবারো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু’একজন ছাত্রের অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না। জঙ্গিবাদে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জন্ম নেয় নেতিবাচক ধারণা। 

জানা যায়, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে এ চিঠি দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জঙ্গি র‌্যাডিকালাইজেশনসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক কাজের ইন্ধন রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে লিখিত আকারে জানানোর কথা বলা হয়।

চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে তার শীর্ষেই রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি। রয়েছে, প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। আরো আছে, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকায় আছে নামকরা ইংরেজী মাধ্যম প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা, লেকহেড গ্রামার স্কুল (ধানমন্ডি, বনানী ও মোহাম্মদপুর), স্কুল আগা খান স্কুল (উত্তরা)। একইভাবে দেশের শীর্ষ স্থানীয় কিছু মাদরাসার নামও রয়েছে বলে জানা গেছে। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর এসব প্রতিষ্ঠানের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, মাদরাসা মসজিদে এক শ্রেণি উগ্রবাদী ছাত্র, শিক্ষক টার্গেট করে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব সাইট, ভিডিও ফুটেজ, জিহাদী বই, জিহাদী বক্তব্যসম্বলিত অডিও’র মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে করণীয় ঠিক করতে কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা ও মসজিদে নিরীক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের জঙ্গিবিরোধী আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রছাত্রী যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তাদের সম্পর্কে নিকটবর্তী থানা ও গোয়েন্দা সংস্থার নিকট নিয়মিত রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা। উঠতি বয়সী যুবক নিখোঁজ সংক্রান্তে থানায় জিডি হলে তা অনুসন্ধানপূর্বক নিখোঁজের ছবি, মোবাইল নম্বর ও প্রয়োজনীয় তথ্যসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা এবং ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়ে ভাড়া প্রদানে বাড়ির মালিকদের সতর্ক করা।

এদিকে গত ১২ নবেম্বর ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার “সন্ত্রাসের আঁতুরঘর বলে চিহ্নিত ঢাকার দেড় ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আর যাতে সন্ত্রাসী কিশোর তৈরি না হয় সেদিকে কঠোর সতর্কতা সরকারের নজর শিক্ষায়তনে। অঙ্কুরেই বিনাশী শক্তির বিনাশ। তালিকায় ঢাকার ১৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বাইরে তিনটি। তালিকার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট-ও রয়েছে। গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে দু'টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ন’টি মাদরাসা ও তিনটি মসজিদের নাম।’

এতে আরো বলা হয়, ‘সবচেয়ে উদ্বেগ বুয়েটকে নিয়ে। তদন্তে জানা গেছে, তাদের ৭২ শতাংশ শিক্ষকই জামাত বা হিযবুত তাহরীরের সদস্য। ছাত্রদের ওয়েবসাইট, ভিডিও ফুটেজ, জেহাদি বই, অডিও সিডি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করাটা তাঁদের কাজ। বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগে যা হয়েছে তার সঙ্গে বর্তমানের তুলনা চলে না। যদি নতুন কোনো অভিযোগ জমা পড়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবো। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কিছুদিন আগেও জঙ্গিদের আঁতুরঘর ছিলো।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধের জন্য অপরাধীর শাস্তি হবে। কারো গাফলতির কারণে অপরাধ বৃদ্ধি পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিশেষের অপরাধের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী। তারা যুক্তি প্রদর্শন করে বলছেন, প্রশাসনে যেমন কেউ অপরাধ করলে শাস্তি দেয়া হয়, আইন শৃংখলা বাহিনীর কেউ অপরাধ করলেও একইভাবে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়, কিন্তু গোটা প্রশাসন বা আইন শৃংখলা বাহিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ