শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সাঁওতালদের ওপর নির্যাতন করা হয়নি -শিল্প সচিব

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি জমি দখলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর কোন ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে গতকাল সোমবার সকালে গোবিন্দগঞ্জে রংপুর সুগার মিলের জমি উদ্ধারের বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
সচিব জানান, যে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তারা কখনো ওই জমির মালিক ছিলেন না। তিনি বলেন, সেখানে তারা অবৈধভাবে বসেছিলো তাই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো কখনোই তাদের বাড়ি ছিলো না। তাদের এলাকায় তো কেউ আক্রমণ করেনি। শুধুমাত্র অবৈধ দখল করে যারা ছিলো তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জে জমি দখল ও দখলমুক্ত করার সরকারি চেষ্টার ফলে যে ঘটনা ঘটেছে, এর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত রয়েছে বলে জানান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি জানান, মহলটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। শিল্পসচিব বলেন, হতাহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই এলাকার ভূমিহীন সাঁওতালদের সরকারি উদ্যোগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু চিনিকলের জমিতে কোনো অবৈধ দখলদার থাকতে পারবে না।
ভূমি বিরোধের জের ধরে চিনিকলকর্মীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে সময় হতাহতের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী নয় বলেও দাবি করেছেন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সংঘর্ষ ‘মিটে গেলেও’ আন্দোলনকারীরা পরিস্থিতি ‘অস্বাভাবিক করে রেখেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ‘প্ররোচনা’ রয়েছে। যে দুজন মারা গিয়েছে, যখন অপারেশন হয় সেই পর্যায়ে, একজন খাট থেকে পড়ে আরেকজন কোথায় যেন... পরে পল্লীতে মারা গেছে, সেটাতো খবরের কাগজেও আমরা দেখেছি। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নাই, কেউ বলে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, কেউ কেউ বলে সে আগে আহত হয়েছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন শিল্প সচিব। সংঘর্ষের দিন সাঁওতালদের উপর গুলী ছুড়ছে পুলিশ, যা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশে বলে ওসি জানিয়েছেন।
গত ৬ নবেম্বর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলী চালায় পুলিশ। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলীবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি এখন আবার ইজারা দিয়ে সেখানে ধান ও তামাক চাষ চলছে অভিযোগ করে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেছিলেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দেয়।
ব্রিফিংয়ে শিল্পসচিব দাবি করেন, পুলিশ-র‌্যাবের অবস্থানের মধ্যে সাঁওতালরা সরে যাওয়ার পর আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এলাকার কিছু বহিরাগত এসে এরা যখন সরে যায় তখন কেউ কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়। এটাও খবর পাওয়া যায়, যারা তাদের এখানে বসিয়েছিল তারাও এটার সাথে সংযুক্ত হয়ে বলেছে, এখান থেকে চলে যাওয়ার আগে তোমাদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ জমি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে সাঁওতালদের সংঘটিত করেছে মন্তব্য করে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, যে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি হয়েছে, সেখানে শুধু সাঁওতালরা না, স্বার্থান্বেষী কিছু লোক বাইরে থেকেও সেখানে এসেছে। তাদের নিয়ে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে অস্থায়ী স্থাপনা কিছু কিছু করে তোলা শুরু করে। এদের মধ্যে সবাই যে আদিবাসী তা না।
শিল্প সচিব দাবি করেন, যারা সেখানে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেছিল, তাদের সবাই ভূমিহীন নয়। আমাদের সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খোঁজ নিয়ে জেনেছে, তাদের অনেকের নিজস্ব বাড়ি-ঘর আছে বিভিন্ন জায়গায়। তিনি অভিযোগ করেন, সুগার মিল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ইউএনও ও পুলিশ মিলে ১২ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘বুঝিয়ে-শুনিয়ে’ সরিয়ে দিতে গেলে তীর-ধনুক নিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়। আমরা কোনো রক্তপাত চাইনি। স্থানীয় প্রশাসন, গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা কর্ণপাত না করে উচ্ছৃঙ্খলতা করে। মোশাররফ হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে ওই জমি ‘অবৈধ দখলমুক্ত’ করতে প্রচার চালানো হয়। পাশাপাশ গাইবান্ধা-৪ আসনের সাংসদ রবীন্দ্রনাথ সরেনসহ স্থানীয় আদিবাসী নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক ডাকা হয়। তারপরও ‘অবৈধ দখলদাররা’ জমির দখল ছাড়েনি। এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ