অগোছালোভাবে চলছে ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী দলের কার্যক্রম
৭ নবেম্বর, সিএনএন : কোনও কিছুই সময় মতো হচ্ছে না। সবই থমকে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্তবর্তীকালীন উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে ক্রিস ক্রিস্টিকে সরিয়ে মাইক পেন্সকে দায়িত্ব দেওয়ার পর ট্রাম্প টাওয়ারে শুরু হওয়া নিশ্চলতা থামেনি। বরং সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই নিশ্চলতা অস্থিরতাও বাড়িয়ে চলেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আটদিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে গঠিত ট্রাম্পের অন্তবর্তী উপদেষ্টা দল এখনও পেন্টাগন, পররাষ্ট্র দফতর ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার জন্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্বাচনের কয়েকদিনের মাথায় ক্ষমতা হস্তান্তরে যে দলগুলো গঠন করেছেন সেগুলো সোমবার নাগাদ ডিসিতে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ট্রাম্পের কমিটি থেকে এখনও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। উপদেষ্টা কমিটির প্রধান-এর পদ বদল করাতেই এতসব জটিলতা ও বিলম্ব হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএন-এর প্রতিবেদনে। সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের রানিংমেট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী দলের নেতৃত্বে থাকা ক্রিস্টিই পারস্পরিক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে ক্রিস্টিকে সরিয়ে দেওয়ার পর সেখানে পেন্সের স্বাক্ষর আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরজন্য কাগজপত্রের নতুন কপি প্রয়োজন হবে। আর সে কাগজপত্রই মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্রান্ডি হফিন।বুধবার রাতে সাংবাদিকদেরকে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির মুখপাত্র শন স্পাইসার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিচার বিভাগ ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রথম দলগুলোর নাম ঘোষণা করবে ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী দল। আর আগামী সপ্তাহে অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিমালাসংক্রান্ত দলগুলো ঘোষণা করা হবে। তবে তারা কখন ওয়াশিংটনের এজেন্সিতে পৌঁছাবেন তা তখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। ওই দলগুলোতে থাকা ব্যক্তিরাই ওবামা প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে থাকা হোয়াইট হাউসের পদগুলোতে অধিষ্ঠিত হবেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বুধবার রাত পর্যন্ত ট্রানজিশন টিমে কারা থাকছে সে নামগুলো হাতে পাওয়া যায়নি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্রান্ডি হফিন বলেন, ‘আমরা যদি ওই নামগুলো এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্রগুলো হাতে পেতাম তাহলে আমরা যে ব্রিফিং ম্যাটেরিয়াল তৈরি করেছি সেগুলো তাদেরকে দিতে পারতাম এবং পরবর্তী প্রশাসনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটি বাধাহীনভাবে চালিয়ে যেতে পারতাম।’
উল্লেখ্য, ট্রানজিশন টিমে কারও নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু আচরণবিধি রয়েছে। ট্রানজিশন টিমে যারা থাকবেন তাদের ক্ষেত্রে স্বার্থজনিত কোনও দ্বন্দ¦ থাকবে না এবং তারা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার আচরণবিধি মেনে চলবেন বলে লিখিত দিতে হবে। অর্থাৎ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে যে ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় তেমনই ছোটখাটো পরীক্ষা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং প্রতিরক্ষা দফতরও (পেন্টাগন) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের উপদেষ্টা কমিটির কোনও সদস্যের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়নি। বেসামরিক সংস্থাগুলোর অনেকেও সিএনএনকে একই কথা বলেছে এবং কেউ কেউ হফিনের বিবৃতির কথা জানিয়েছে। বহির্বিশ্বে তথ্য পাচার করা প্রটোকল ভঙ্গকারী লবিস্টদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রানজিশন টিমকে স্বচ্ছ করার জন্য পেন্স যে অভিযানে নেমেছেন তাতেও এর গতি ধীর হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প এক টুইটে দাবি করেছেন, তার সরকার গঠন প্রক্রিয়া ‘সুসংগঠিতভাবে’ চলছে। ট্রাম্পের উপদেষ্টা দলের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের মুখপাত্র জ্যাসন মিলার বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রানজিশন টিমকে যেমন হওয়া প্রয়োজন আমরা তেমনটাই পেতে যাচ্ছি। এটি এমন একটি টিম হতে যাচ্ছে যারা প্রশাসনের জন্য সঠিক লোক বাছাই করতে পারবে যেমনটা ট্রাম্প চেয়েছিলেন।’
ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী দলটি ১৬ সদস্যের । ওই নির্বাহী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। কিন্তু নির্বাচিত হওযার অব্যবহিত পরেই ক্রিস্টিকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থানে নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয। সান্ত¦না হিসেবে ক্রিস্টিকে এই কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন বলা হয়, এছাড়া এই টিমের আরেক সদস্য ম্যাথিউ ফ্রিডম্যানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গেও ক্রিস্টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রিস্টিকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই স্থবিরতা নামে অন্তর্বর্তী দলে।