শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সরকারের ফর্মুলায় বিএনপি পা দিলে হঠাৎ আরেকটি নির্বাচন হতে পারে -গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার : শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রাখার যে ফর্মুলা আওয়ামী লীগ এঁটেছে তাতে যদি বিএনপি পা দেয় তাহলে হঠাৎ আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচনে বর্তমান সরকার তার ক্ষমতা নবায়ন করে নেবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্র আছে, কিন্তু আমাদের নেই। প্রতিবেশী বন্ধু দেশ চায় না বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে পা দিলে বিএনপির সামনে দুর্দিন আছে উল্লেখ করে বাবু গয়েশ্বর বলেন, ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না। পাশের দেশে গণতন্ত্র আছে অথচ আমাদের দেশে গণতন্ত্র থাকুক এটা তারা চায় না। তিনি বলেন, এই নির্বাচন খালেদা জিয়াকে রেখেও হতে পারে। আর যদি তিনি আপোষহীন হন তাহলে তাকে বাদ দিয়েও হতে পারে।
বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, যারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে দলে তাদের কদর যদি বেড়ে যায়, তাহলে প্রকৃত নেতাকর্মীদেরকে দুর্দিনে কাছে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। এসব নেতাকর্মী থেকে দলীয় প্রধানকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দুর্দিনে যারা আপনাকে ফেলে যাবে না তাদের হাত পা দুর্বল করে দেবেন না। যারা সুবিধাবাদী তাদের কথা শুনলে ক্ষতি হবে। একটু সতর্ক থাকেন। জীবনে অনেক কিছু শেষ হয়ে গেছে।
দলে এমন কিছু রাজনীতিবিদ আছেন যারা সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে, আবার বিএনপিকেও খুশি রাখে এমন অভিযোগ করে দলের এই সিনিয়র নেতা বলেন, উভয় দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। সুবিধা নিতে গিয়ে যারা ভাণ্ডার ভরছে তাদের ভাণ্ডার যাতে খালি না হয় তাই তারা দুই কূলই রক্ষা করছে। তাই আমি আহ্বান জানাবো খালেদা জিয়া যেন এসব চাটুকার মোসাহেবিদের থেকে সতর্ক থাকেন।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আন্দোলন কেমনে হবে সবাই ঘুরে পদের তদবীরে। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে শত্রু শিবিরে ধাক্কা দিতে পারবো।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতাতুল্লাহ প্রমুখ।
এদিকে গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর বলেন, খালেদা জিয়াকে জব্দ করার জন্যই এই মামলা দেয়া হয়েছে। কারণ তারা জানে যে, সরকারের পক্ষে কোনো জনসমর্থন নাই।
মিথ্যা মামলার সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্মদিন। আবার প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট। জন্মদিনে মানুষ আনন্দ করে আর মৃত্যু দিনে শোক করবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি প্রধান মন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনার বাবার হত্যা দিবস হলেও আপনিতো ঠিকই ভারতকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তবে ওই দিন বেগম জিয়ার জন্মদিন হলে আর তিনি কেক কাটলে আপনার সমস্যাটা কি?
আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের কারণেই শেখ মুজিব সমালোচিত হন উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আজ কারা? শেখ মুজিব হত্যার পর মোস্তাক সরকারে শপথ পড়িয়েছিলেন এইচ টি ঈমাম। তিনি আজ শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। সেই সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি এও বলেন, শেখ মুজিবকে হত্যার সময় তোফায়েল আহমেদ রক্ষীবাহিনীর প্রধান ছিলেন। তখন তার ভুমিকা কি ছিল? ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়রাও রাজাকারদের সঙ্গে ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন গয়েশ্বর। প্রধানমন্ত্রী নিজেও গুম খুন করেন বলেই মুসলিম রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো কথা বলেন না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ১৫ আগস্ট জন্মদিনে বেগম জিয়া আনন্দ করলে শেখ হাসিনার গায়ে লাগে বলেই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে এই মামলা করিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনাক্রমে ১৫ আগস্ট যদি ঈদের দিন হয় তাহলে কি দেশবাসীকে ঈদের আনন্দ করতে দেবেন না। রিজভী বলেন, বেগম জিয়ার জন্ম দিনে যদি ঈর্ষা হয় তাহলে আপনার বাবার গায়ের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানো মতিয়া চৌধুরী কিভাবে আপনার মন্ত্রী সভায় থাকে। হাসানুল ইনু কিভাবে মন্ত্রী থাকে।
প্রধানমন্ত্রী অতীত থেকে শিক্ষা নিলে এখন আর আগের মতো ভুল করতেন না বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসরেন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহ উদ্দিন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ