শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ১৫ দফা সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার : মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ১৫টি সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। সুপারিশ অনুযায়ী, পরীক্ষার সময় ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হবে কয়েকটি বিষয়। এ বিষয়গুলো বিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনা হবে। শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা; চারু ও কারুকলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গত ২৫ ও ২৬ নবেম্বর কক্সবাজারের শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কর্মশালা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরতে এ সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী।

দুটি সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় বেধে দেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বিষয়গুলো (বাস্তবায়ন) আমাদের কাজ করার উপর নির্ভর করবে। যখন আমরা প্রস্তুত হবো তখনই বাস্তবায়নের তারিখ নির্ধারণ করবো। সবার মতামত নিয়েই আমরা বুঝবো এটা (সুপারিশগুলো) প্রয়োগের সময় এসেছে।

কয়েকটি বিষয় এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয়গুলোর গুরুত্ব কমাচ্ছি না। এ বিষয়গুলোর যে প্রয়োজন রয়েছে তা অস্বীকার করছি না। সম্পূর্ণ গুরুত্ব দিয়েই রাখবো কিন্তু মূল্যায়ন ভিন্নভাবে করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি। তাতে আমাদের পরীক্ষার সময় কমে আসবে। এতে ক্লাসটা বেশি নেয়া যাবে।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, এ বিষয়গুলো যাতে স্কুল পর্যায়ে যথাযথভাবে পড়ানো হয় এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেজন্য কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলার বিষয়ে প্রতিযোগিতার ও কৃতিত্বের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

সুপারিশগুলো তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষাবিদদের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।

নবম ও দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যবই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা হবে। এজন্য দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং লেখকদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল তৈরি করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

পরিমার্জনের জন্য একটি টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে যাতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো নিশ্চিত হয়। ২০১২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করার জন্য দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অন্যান্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহিত করতে তা কো-কারিকুলাম একটিভিটির (সহ-শিক্ষা কার্যক্রম) অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বছরে একদিনকে বই পড়া দিবস হিসেবে পালন করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। শিক্ষকদের পাঠদানে সহায়তার জন্য উপযুক্ত টিচার্স গাইড যথাসময়ে প্রণয়ন ও মানোন্নয়ন করা প্রয়োজন।

এমসিকিউ ও সৃজনশীল প্রশ্নের মান উন্নয়নের জন্য ‘আইটেম ব্যাংক’ তৈরি করা যেতে পারে। প্রশ্নের সঙ্গে নমুনা কিছু উত্তর যাচাই-বাছাই করে সরবরাহ করা বা উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে যা শিক্ষার্থীদের উত্তর দিতে সহায়ক হবে।

যশোর বোর্ডের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আইটেম ব্যাংক প্রণয়নে একটি ধারণাপত্র প্রণয়ন করে বাংলাদেশ শিক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ) অবিলম্বে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সকল শিক্ষককে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে আবশ্যিকভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে বলে সুপারিশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।

সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরীক্ষা পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘র-স্কোর’ এর পরিবর্তে ‘স্ট্যান্ডারাইজ স্কোর’ ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা অপরিহার্য। তবে বিষয়টি নতুন বলে এটি নিয়ে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা প্রয়োজন।

সুপারিশ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষা উন্নয়ন ইউনিট ‘স্ট্যান্ডারাইজ স্কোর’ এর মাধ্যমে একটি পরীক্ষামূলক ফল তৈরি করবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ