বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ইসি গঠনে এর চেয়ে ভাল প্রস্তাব থাকলে বলুন

স্টাফ রিপোর্টার: ইসি গঠনে খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘শক্তিশালী ইসি গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুধুমাত্র প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাবে ভুল ও দুর্বলতা থাকলে সেটা বলুন, এমনকি এর চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে থাকলে তা-ও বলুন।

 গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ,কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। 

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রস্তাব দেয়ার আহহ্বান জানিয়ে বিএনপির নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দেয়া প্রস্তাবে কোনো ভুল থাকলে বলেন। এর থেকে ভালো কোনো প্রস্তাব থাকলে দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এদের (বিএনপি) সঙ্গে কিসের আলোচনা? মূল কথা হলো তিনি নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা করতে চান না। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আমাদের প্রস্তাবে কোনো ভুল থাকলে সেটা বলেন। আর যদি ভালো কোনো প্রস্তাব থাকে তাহলে দিতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ জানে ভালো নির্বাচন কমিশন হলে তারা বিজয়ী হতে পারবে না। তারা ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, যে নেত্রী বারবার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তিনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যোগ্য, সাহসী ও দক্ষ নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনের কথা বলে একটি প্রস্তাব দিলেন। তা নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হলো। চেয়ারপারসনের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই তাদের সাধারণ সম্পাদক বললেন, এটা অন্তঃসারশূন্য। আবার বললেন এতে কিছু থাকলে তা রাষ্ট্রপতি দেখবেন। এর মানে কিছু ভালো কথা আছে। যে বক্তব্যে ভালো কথা থাকে সেটা অন্তঃসারশূন্য হয় কিভাবে?

তিনি বলেন, এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে বারবার সুযোগ দিবো কি না। যদি সুযোগ না দেই তাহলে আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হবে। এজন্য আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের চাওয়াগুলো নিয়ে ইতিবাচকভাবে জনগণকে সংগঠিত করতে হবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) দেশে যা যা হত্যা করেছে, বিএনপি তা পুনরুদ্ধার করেছে। দেশে কে গণতন্ত্রের পক্ষে আর কে বিপক্ষে তা স্পষ্ট নয়। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। আবার এরশাদের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা ছিলো সকল বিরোধী দলের। সে সময় চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে তিনি গেলেন। আর ওই নির্বাচনে না গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হলেন।

দেশে এখন গণতন্ত্র নেই দাবি করে তিনি বলেন, নয় মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। ওই যুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করেছিলো। সে জন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। অন্যদেশের বাহিনীর কারণে দেশ স্বাধীন হয়নি। এদেশের যোদ্ধাদের কারণেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্র ও শোষণ থেকে মুক্তির জন্য দেশ স্বাধীন হলেও দেশে এখণ গণতন্ত্র নেই। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ভুটান কিংবা সিকিম নয়, এই দেশ বাংলাদেশ। তাই প্রধানমন্ত্রী শত চেষ্টা করেও ১৬ কোটি মানুষকে অন্যায়ভাবে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি অনুগত পুলিশ ও র‌্যাব দিয়েও গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন দমন করা যাবে না। জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী আহমেদ বলেন, আপনি দেশের অভিভাবক। কিন্তু আপনার মুখে বিরোধীদলের প্রধানদের বিরুদ্ধে এমন অশ্লীল বক্তব্য শুনে দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে। ফলে দেশে গণতন্ত্র দূরে থাক কোনো ভদ্র লোক এদেশে বসবাস করাটা মুশকিল হয়ে যাবে। আপনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, সুষ্ঠু হবে না।

দেশে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে রুহুল কবির বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন গোরস্থানে অবস্থান করছে। নাগরিক স্বাধীনতা নেই। 

 ’৭১’র ন্যায় ভারত সরকার এখনও বাংলাদেশ থেকে লুটপাট করে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর আমি যশোরে ছিলাম। ওই সময় ভারতের বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট লুটপাট করেছে। সেই লুটপাটের ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আর তারাই বড়াই করে বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা তারা এনে দিয়েছে। ভারতের জঘন্য অত্যাচার মেনে নেব না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছি আমরা- ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকারের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, লজ্জা-সরম থাকলে তিনি এধরনের কথা বলতেন না। উনাদের ধর্মেতো আবার এগুলো যায় না।

বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মানবতা ও রাজনৈতিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া উচিত। বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্ত খুলে দিন এবং তাদের জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দিন। যাতে সবার সঙ্গে মিশে না যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ