শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জানুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম আবারো ৫০ শতাংশ বাড়ছে

শাহেদ মতিউর রহমান : নতুন বছরের শুরু থেকেই আবারো গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে সরকার। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকেই আবাসিক গ্যাস এবং সিএনজি’র দাম একই সাথে বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজস্ব বাড়াতে আইওসি গ্যাসে শুল্ক ও ভ্যাট যুক্ত করে গ্যাসের দাম বাড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্রাহক পর্যায়ে আবাসিকে ব্যবহূত গ্যাসের দাম বাড়ছে ৫০ শতাংশ। একই সাথে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দামও। চলতি মাসেই গ্যাসের নতুন মূল্যহার ঘোষণা করা হবে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে। আর আগামী বছরের শুরু থেকেই বর্ধিত এ মূল্য কার্যকর হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদ কমে আসায় রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে চায় সরকার। এর বিপরীতে এলপি গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সিএনজি স্টেশন থেকে শিল্পে অবৈধ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে চায় সরকার। এ কারণে এ দুই খাতে গ্যাসের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো আবাসিকে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৮৪ ও সিএনজির ৪৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল।
বর্তমানে আবাসিকে সিঙ্গেল বার্নারের (এক চুলা) জন্য গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হয় মাসে ৬০০ টাকা। আর ডাবল বার্নারের (দুই চুলা) পরিশোধ করতে হয় ৬৫০ টাকা। দাম বৃদ্ধির  বিষয়ে  বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুল হক বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব ও গণশুনানিতে উঠে আসা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা নতুন মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কাজ করছি। আশা করি, এ মাসের মধ্যেই গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে। এরপর তা ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপাদনে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক কোম্পানি (আইওসি) রয়েছে তিনটি।  অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন ও যুক্তরাজ্যের তাল্লো। এসব কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে গ্রাহক পর্যায়ে কম দামে বিক্রি করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৯৯৩ সালে জারি করা ২২৭ নং এসআরও অনুযায়ী আইওসি গ্যাস শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত। কিন্তু গত বছরের শুরুতে এনবিআর ওই এসআরও স্পষ্টীকরণ করে পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ৫৫ শতাংশ রাজস্ব দাবি করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আট মাসের মাথায় গত ৩০ মার্চ নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাতে আবাসিকে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল বিদ্যমান ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ ও এক চুলার জন্য ৬০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ১০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়। আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা প্রস্তাব করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। অন্যান্য গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুতে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে ৩৬, ক্যাপটিভে ১২৭ দশমিক ২৭, শিল্পে ৫৬, বাণিজ্যে ৬৭ ও চা বাগানে ৬৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করা হয়।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদনের ওপর গত আগস্টে গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। শুনানিতে বিতরণ কোম্পানি ও ভোক্তা প্রতিনিধিদের বক্তব্যে আইওসি গ্যাস শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত থাকলে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলে উঠে আসে। কিন্তু রাজস্ব বাড়াতে আইওসি গ্যাসে শুল্ক ও ভ্যাট যুক্ত করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের গ্যাসের দামই বিভিন্ন হারে বাড়ছে বলে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে।
গ্রাহক ও বিতরণ কোম্পানি উভয়ের দাবির যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করেই গ্যাসের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানান বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কমিশন হিসেবে আমাদের যেমন গ্রাহকের স্বার্থ দেখতে হবে, একই সঙ্গে সরকারের রাজস্বের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব কোম্পানিই লাভজনক অবস্থানে রয়েছে। চাহিদার তুলনায় রাজস্ব উদ্বৃত্তও রয়েছে অনেকের। যেসব কোম্পানির রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে, তাও খুব সামান্য। এ ঘাটতি সমন্বয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু গ্যাসের মজুদ দিন দিন কমে আসছে, তাই এর ব্যবহার যাতে ফলপ্রসূ হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ হতে পারে। কিন্তু তা যেন সহনীয় পর্যায় অতিক্রম না করে। কারণ সহনীয় পর্যায়ে গ্যাসের দাম না থাকলে দৈনন্দিন জীবন ও পরিবহন খাতে নৈরাজ্য দেখা দেবে।
সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। সে সময় সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। আবাসিকে এক চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৪০০ টাকার স্থলে ৬০০ ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়। এছাড়া মিটারভিত্তিক গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ৫ টাকার স্থলে ৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা, শিল্পে ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা, বাণিজ্যে ৯ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা ও চা বাগানে ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। তবে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম যথাক্রমে ২ টাকা ৮২ পয়সা ও ২ টাকা ৫৮ পয়সায় অপরিবর্তিত রাখা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিদ্যুৎ, শিল্প, আবাসিকসহ সব খাত মিলে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩২০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দেশী ও আইওসি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। উৎপাদিত গ্যাসের সিংহভাগ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ খাতে। এছাড়া আবাসিকে ব্যবহার হয় ১৩ দশমিক ৪৭ ও সিএনজিতে ৫ শতাংশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ