বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে

গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে Global Forum on Migration and Development (GFMD-2016)-এর নবম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ছবি : বাসস

বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে তাদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু ২০১৭ সালে জিএফএমডি বৈশ্বিক পর্যালোচনায় প্রবেশ করছে, আমাদের অবশ্যই অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, প্রত্যেক অভিবাসী যেন মর্যাদা পায় এবং নিরাপদে চলাফেরা ও কাজ করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসন আর কোনোভাবেই ‘আমাদের’ এবং ‘তাঁদের’ মধ্যেকার বিষয় নয়; এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি।’
বৈশ্বিক উন্নয়ন রূপকল্প যা এজেন্ডা ২০৩০ নামেই সমধিক পরিচিত, অভিবাসনকে টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বাস্তবায়নের জন্য আমাদের স্বার্থের কেন্দ্রমুখিনতাকে চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের চাহিদা, প্রত্যাশা, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে।
জাতিসংঘের ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উ হংবো, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম লেসি সুইং, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডার, ইউএন ওমেন-এর ইন্টার গভর্নমেন্টাল সাপোর্ট এন্ড স্ট্রাটেজিক পার্টনারশীপ বিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল লক্ষীপুরী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ফ্রাংকোয়িস ফৌনাট অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
নতুন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টনিও গ্যুটারেজের একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয় এবং সিভিল সোসাইটির পক্ষে জিএফএমডি সিভিল সোসাইটি ডেইজ (সিএসডি) সভাপতি কলিন রাজা জিএফএমডি২০১৬ সম্পর্কে সিভিল সোসাইটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠনে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলামও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ শুধু কাজের জন্য নয়, বহুবিধ কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিচরণ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিচরণ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কীভাবে মানুষের চলাফেরা আরও নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারি। পাশাপাশি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, একজন ব্যক্তি যেন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চলাফেরা করতে পারেন।
প্রত্যেক অভিবাসীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রসংগে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আরও নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, প্রতিটি অভিবাসী যেন মর্যাদা এবং নিরাপদে চলাফেরা ও কাজ করতে পারেন। তাঁদের অবস্থা নির্বিশেষে, যে কোন পরিস্থিতিতে, তাঁদের অধিকার যাতে সুরক্ষা পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি। অভিবাসন আর কোনভাবেই ‘আমাদের’ এবং ‘তাঁদের’ মধ্যেকার বিষয় নয়, এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়।
অভিবাসনকে একটি জটিল মানবিক ব্যাপার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিবাসন এবং অভিবাসীকে ভয় পাওয়ার বা তাদের এড়ানোর কোন কারণ নেই। বরং অভিবাসন সুশাসনে উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে অভিবাসনের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ একটি ব্যাপকভিত্তিক ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন গভার্নেন্স’ প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমি এটা দেখে আনন্দিত হয়েছি যে, বিশ্ব আমাদের মাইগ্রেশন কমপ্যাক্ট প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু সংক্রান্ত একটি ব্যাপকভিত্তিক বৈশ্বিক চুক্তি বা কমপ্যাক্টে উপনীত হওয়ার জন্য কাজ করছি যাতে তা ২০১৮ সাল নাগাদ জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে, এক্ষণে একটি নতুন চুক্তি প্রণয়নে আমি আপনাদের উচ্চাভিলাষী, বাস্তববাদী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে আহ্বান জানাতে চাই। এজেন্ডা ২০৩০-এ অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বিয়য়ে যে অঙ্গীকার আমরা করেছি তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটি অনুমানযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিএফএমডি’র সভাপতি পদে বাংলাদেকে সমর্থনদানের জন্য তিনি সকল বন্ধু এবং সহযোগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
১২৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও অধিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এই তিন দিনব্যাপী জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন।
অভিবাসন ও বৈশ্বিক শরণার্থী পরিস্থিতির করণীয় নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবারের এই সম্মেলনে। অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক দশক আগে জিএফএমডি সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পদ লাভ করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ