শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ডেইলি মেইলের জরিমানা ও ক্ষমা প্রার্থনা

ডেইলি মেইল একটি প্রভাবশালী বৃটিশ ট্যাবলয়েড। সেখানকার একটি মুসলিম পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর ছাপার দায়ে এর মালিকপক্ষ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনাসহ দেড় লাখ ইউরো জরিমানা প্রদান করেছেন। ট্যাবলয়েডটিকে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিহীনতা সম্পর্কে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত রিপোর্টও ছাপতে হয়েছে। তারিক মাহমুদ ও জাহিদ মাহমুদ দুইভাই পরিবারসহ ডিজনিল্যান্ডসহ আমেরিকা ভ্রমণে যেতে চাইলে গত বছর মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মাহমুদ পরিবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সফর বাতিল করে দেয়। ডেইলি মেইলের কলামিস্ট ও রিপোর্টার কেটি হপকিন্স উল্লেখ করেন, মাহমুদ ভ্রাতৃদ্বয় সন্ত্রাসী দল আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত। ডিজনিল্যান্ড পরিদর্শন করবার কথা ট্রাভেলিং সিডিউলে উল্লেখ থাকলেও তা ছিল অজুহাত মাত্র বলে ডেইলি মেইলের হপকিন্স দাবি করেন। তিনি গত বছর ২৩ ও ২৯ ডিসেম্বর মাহমুদ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ২টি রিপোর্ট বা কলাম প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তাদের আইনসঙ্গতভাবেই আমেরিকা প্রবেশ করতে দেয়নি। হপকিন্স আরও উল্লেখ করেন যে, তারিক মাহমুদের ছেলে হামজা মাহমুদও একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তবে তদন্তে ডেইলি মেইলের রিপোর্ট ও কলামিস্ট হপকিন্সের আনা কোনও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তাই ট্যাবলয়েডটিকে উল্লিখিত পরিমাণ ইউরো জরিমানা এবং মাহমুদ পরিবারকে তাদের মামলা পরিচালনার খরচ প্রদান করতে হয়। অপরদিকে সাংবাদিক কেটি হপকিন্সও টুইটবার্তায় মাহমুদ পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মাহমুদ পরিবারের আইনজীবী কার্টার রক জানান, কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা নিছক ছুটি কাটাতেই বৈধভাবে আমেরিকা ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। অথচ একজন সাংবাদিক ও তার প্রখ্যাত দৈনিকটি তাদের দুর্ভোগে ফেলে ভ্রমণ পরিকল্পনাটি তছনছ করে দিল। কিন্তু কেন? কী তাদের অপরাধ?
শুধু ডেইলি মেইলই নয়, পৃথিবীর আরও অনেক সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম তথা টিভি, রেডিও, অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রভৃতি নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাবার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ও কল্পনাপ্রসূত রিপোর্ট করে জনমনে যেমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তেমনই মানুষের চরিত্র হননের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কিন্তু এমন কর্মকাণ্ড কোনও মিডিয়ার বা গণমাধ্যমকর্মীর পেশাগত কাজ নয়। বরং সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যেকোনও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, একশ্রেণির মিডিয়া বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষমতাসীনদের অশুভ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করে, তেমনই একশ্রেণির সাংবাদিকও স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বশবর্তী হয়ে মিথ্যার বেসাতি করেন। সত্য প্রকাশের পরিবর্তে মিথ্যাই তখন নানা রঙে-বর্ণে সাধারণ পাঠক ও দর্শকের কাছে উপস্থিত হয়। এতে মিডিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের যে বিশ্বাস বা নির্ভরতা থাকবার কথা তা আর থাকে না। সংবাদপত্র বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সমাজের দর্পণ হিসেবে দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতাসীনদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষের বঞ্চনার কথা না বলে সংবাদপত্র বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যখন ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালীদের মুখপত্ররূপে কাজ করে, তখন আধুনিক সভ্যতাকেই ধিক্কার দিতে হয় বৈকি। বলতে দ্বিধা নেই, শুধু লন্ডনের ডেইলি মেইলই নয়, এশিয়ার অনেক মিডিয়াই এখন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে না দাঁড়িয়ে হীন স্বার্থের পক্ষে অন্ধকার জগতের কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদপত্রসহ প্রায় সবরকমের মিডিয়াই আজকাল একনিষ্ঠ হয়ে সত্যের পক্ষে কাজ করতে পারছে না। আর যে দু’-একটি গণমাধ্যম সত্য-ন্যায়ের পক্ষে থেকে কাজ করতে চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের এখন ভীষণ দুর্দিন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীনরাসহ অন্য প্রভাবশালীদের তরফ থেকেও প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকির প্রবল ঢেউ তাদের ওপর আছড়ে পড়ছে। আমাদের দেশেও ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্য আঁকড়ে থাকা গণমাধ্যমগুলোর ত্রাহি অবস্থা।
যাইহোক, বৃটেনের আদালত ডেইলি মেইলের মতো প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী পত্রিকাটির মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এতে বোঝা যায়, মিথ্যাবাদীরা যতই ক্ষমতাধর হোক, সত্য ও ন্যায়ের কাছে তাদের হারতেই হয়। মিথ্যার বেসাতি করে কখনও কখনও পার পাওয়া গেলেও সব সময় তা সম্ভব নাও হতে পারে। ডেইলি মেইলের ক্ষমা প্রার্থনা ও জরিমানার ইউরো গোনা থেকে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মীদের বড় একটা শিক্ষা নেবার নিশ্চয়ই আছে বলে আমরা মনে করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ