ভারতে এবার নোট বাতিল ইস্যুতে টাকশাল কর্মীদের বিদ্রোহ
২৯ ডিসেম্বর, আনন্দবাজার : ‘আর পারছি না।’ এমন কথা বলে বেঁকে বসেছেন ভারতের শালবনি টাকশালের কর্মীরা। আর তারা অতিরিক্ত সময় কাজ করবেন না। তাদের অভিযোগ, ‘যা পরিস্থিতি তাতে বাতিল নোটের জায়গায় নতুন নোট আসতে আরো এক মাস লাগবে।
এমন চাপে আমরা কাজ করতে পারব না। আমরা শুধুমাত্র নিয়মমাফিক ৯ ঘণ্টার কাজই করব।’ বুধবার শালবনি টাকশালের কর্মীরা বন্ধ করে দিয়েছেন নোট ছাপার কাজ। শালবনি টাকশালের জেনারেল ম্যানেজার গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে রির্জাভ ব্যাঙ্ককে ই-মেল পাঠিয়েছেন।
নোট বাতিলের পর থেকে এখনো স্বাভাবিক হয়নি ভারতের পরিস্থিতি। ভারতজুড়ে চলছে নোট সঙ্কট। তার মধ্যেই কেন্দ্রের কপালে ভাঁজ ফেলে দিলেন শালবনি টাঁকশালের কর্মীরা। বুধবার এক শিফটের পরে কাজ বন্ধ করে দিলেন তাঁরা। কর্মীদের অভিযোগ, ‘এত চাপ সহ্য করা যাচ্ছে না। ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে বাঁচাতে টানা দেড় মাস দিন-রাত এক করে কাজ করেছি আমরা। কিন্তু আর পারছি না।
অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বাড়িতে সময় দিতে পারছি না। এভাবে চলতে পারে না। আমাদের পক্ষে আর অতিরিক্ত সময়ে কাজের চাপ নেয়া সম্ভব নয়।’ তাদের প্রশ্ন, ‘শুধু আমাদের ওপরেই এত চাপ দেয়া হচ্ছে কেন?’ অতএব কাজ বন্ধ। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এতদিন ১২ ঘণ্টা করে দিনে দু’টি শিফটে কাজ হচ্ছিল। ফলে এই টাঁকশাল থেকে মোট ৬ কোটি ৮০ লাখ নোট ছাপা হচ্ছিল। ৯ ঘণ্টা শিফট হলে নোট ছাপার উৎপাদন কমে হবে ৩ কোটি ৪০ হাজার। শালবনির এই টাঁকশাল থেকে শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের একটা বড় অংশ–সহ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও নোট সরবরাহ হয়।
ফলে কর্মীদের এই প্রতিবাদের জেরে নতুন বছরের শুরুতেই ব্যাঙ্ক, এটিএমগুলিতে টাকার জোগান আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন নোটের জোগানও কমবে। এদিন শালবনিতে এক শিফটের পরেই কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় মাথায় হাত কর্তৃপক্ষের।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তড়িঘড়ি দুপুরেই শালবনি টাঁকশালের জেনারেল ম্যানেজারসহ পদস্থ কর্তারা কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকে বসেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। সেই ব্রিটিশ আমলে ১৯২৮ সালে স্থাপিত হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন নোট মুদ্রণ কেন্দ্র। বর্তমানে কর্নাটকের মহীশূর ও এ রাজ্যের শালবনিতে টাঁকশাল রয়েছে। ৮ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন।
সঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে পুরনো নোট বদলে নতুন নোট নেয়ার কথা বলেন। ব্যাঙ্ক ও টাঁকশালের কর্মীদের কাছে আবেদন জানান, কিছুদিন তাঁরা যেন একটু বেশি সময় ধরে কাজ করেন। সরকার তাদের কথা ভাববে। শালবনি টাকশালের কর্মী অলোক রায় বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার মাস খানেক আগে থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে নতুন নোট ছাপার তোড়জোড় চলছিল। এজন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। তারপর তা চূড়ান্ত হয়। গোটা ব্যাপারটাই সময়সাপেক্ষ।
কিন্তু এক্ষেত্রে সেই সময় পাওয়া যায়নি। আগেও আমরা ওভারটাইম করেছি। কিন্তু ৮ নভেম্বর থেকে চাপ আরও বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে আমাদের ১২ ঘণ্টা ধরে কাজ করতে হচ্ছে। কোনও ছুটি পাচ্ছি না। পরিবারকে সময় দিতে পারছি না। আরও আক্ষেপের, এত কাজ করেও চাহিদামতো সব নোটের জোগান দিতে আরও এক মাস সময় লাগবে। এত তাড়াতাড়ি সব কিছু স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়।’
বিষয়টি নিয়ে তারা ১৫ দিন আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
কিন্তু ওপর থেকে নির্দেশ না আসায় পরিস্থিতি বদলায়নি। উল্টে কাজের চাপ অস্বাভাবিক বেড়েছে।’ অলোকের কথায়, ‘আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বড়দিনের আগে আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এনেওছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। তাই বুধবার থেকে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই এদিন আমরা প্রথম শিফটের কাজের পরে আর দ্বিতীয় শিফটের কাজ করিনি।’পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। রাত পর্যন্ত আলোচনা চলছে। তবে কর্মবিরতি নিয়ে শালবনি টাকশাল কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেননি।