বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ইসরাইলের স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিতে পারে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ

কেরির অসংখ্য সময়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে : ওবামা

১১ জানুয়ারি, ফিনান্সিয়াল টাইমস/রয়টার্স : ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়া হলে ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে দেয়া স্বীকৃতি তারা ফিরিয়ে নিতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে দূতাবাস স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। গত মাসে কট্টরপন্থী আইনজীবী ডেভিড ফ্রাইডম্যানকে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মুখপাত্র কেলিঅ্যান কনওয়েও এক মার্কিন রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দূতাবাস সরানোটা ট্রাম্প প্রশাসনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে।’
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেছেন, ‘মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক চপেটাঘাত, আর তার মানে হলো দুই রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়ার সমাপ্তি।’
রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দফতরে শাতায়েহ বলেন, আমার ধারণা ফিলিস্তিনি, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জন্য জেরুসালেমের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন ট্রাম্প।
ফিলিস্তিনি নেতারা তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার বিশ্বব্যাপী সকল মসজিদে বিশেষ দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে রবিবার সকল গির্জায় ঘণ্টা বাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এতোদিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ তাদের দূতাবাস তেল আবিবেই রেখেছেন। শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্যই তা করা হয়। তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসনে দূতাবাস সরানোর ঘোষণা দেওয়ার পর পুরো শান্তি প্রক্রিয়াই ভেস্তে যেতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শাতায়েহ জানিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর দেয়া ভাষণেই ট্রাম্প দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিতে পারেন বলে এক কূটনৈতিক সূত্রে তিনি জেনেছেন। এর বিপরীতে পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা ভাবছে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রুপের জোট প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও)।
তিনি বলেন, ‘পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিতে পারে পিএলও। পারস্পরিক স্বীকৃতির অংশ হিসেবেই পিএলও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর এখন তার বৈধতা থাকছে না।’ ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি অনুযায়ী পিএলও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হয়েছে। শান্তি আলোচনায় জেরুসালেমের এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই শহরটি ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মেরই তীর্থস্থান। ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। ১৯৬৭ সালের আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুসালেমকে নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরাইল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ১শরও বেশি বসতি স্থাপন করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এ বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হলেও ইসরাইল তা মানতে নারাজ।
এদিকে দখলকৃত ভূখ-ে ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নীতি ভবিষ্যতে অঞ্চলটিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে অসম্ভব করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
গত মঙ্গলবার ইসরাইলি একটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সংক্ষিপ্ত নাম উল্লেখ করে ওবামা বলেন, “বিবি (নেতানিয়াহু) সবসময় বলে থাকেন, তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিশ্বাস করেন। অথচ এখনো পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তার কার্যকলাপে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বসতি সম্প্রসারণের ব্যাপারে চাপ দেওয়া হলে তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করে তাতেই অনুমোদন দেবেন।”
ইসরাইলের দখলে থাকা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে বর্তমান প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার ইসরাইলি নাগরিক বসবাস করছেন। তাদের পাশাপাশি ২৬ লাখ ফিলিস্তিনিও বসবাস করছেন।
ওবামা বলেন, গেল কয়েক বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ‘অসংখ্য সময়’ ব্যক্তিগতভাবে নেতানিয়াহুর প্রতি বসতি স্থাপন কর্মকা- বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তার আবেদন বরাবরই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
চ্যানেল টুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, “এই ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান যে বিষয়টি আপনি দেখছেন তার ফলে পরিস্থিতির সমাধান অসম্ভব হয়ে উঠছে। অন্ততপক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে তা কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব করে তুলবে।”
অবশ্য ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে বেশি অনুকূল সমর্থন পাওয়ার আশা করছে।
২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার মেয়াদ শেষ হবে। নয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ