বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে -সুজন

গতকাল মঙ্গলবার ডিআরইউ গোলটেবিল মিলনায়তনে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার। 

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সুজন মনে করে, জনগণের প্রতিনিধিত্ব তখনই নিশ্চিত হবে যখন তারা সরাসরি ভোট দিতে পারবেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সকল নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের অনেকে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অর্থ প্রদান করে ভোট ক্রয় করেছেন বলে সুজন জানতে পেরেছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। সাংবাদিক সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, ‘সুজন’-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনকে নির্বাচন বলা যাবে কিনা এ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। কেননা নির্বাচন মানে হলো চয়েস, বিভিন্ন বিকল্পের মধ্যে বেছে নেয়া। এ নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটে প্রার্থী পছন্দের কোনো সুযোগ ছিলো না। তাই এবার নির্বাচনের নামে পাঁয়তারা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নিকট অতীতের সকল নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে, টাকার খেলা হয়েছে, কিন্তু এ নির্বাচনে সেগুলোর ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। এ নির্বাচনে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না, আবার অনেক জনপ্রতিনিধি জানেও না যে তারা কেন নির্বাচিত হলেন? তাদের দায়িত্বটাই বা কী? সবমিলিয়ে এটি একটি অথর্ব (!) জেলা পরিষদ গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। 

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘সুজন মনে করে, জেলা পরিষদ নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচকমণ্ডলী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন না এই নির্বাচকমণ্ডলীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়।

শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতিই নয়, আইনে বর্ণিত আরও কিছু বিষয়ের সাথে সুজন একমত নয়। আইনের সামগ্রিক সকল বিষয়কে মাথায় রেখে নি¤œবর্ণিত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়:

সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়. বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারের সকল বিভাগকে জেলা পরিষদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উপজেলা পর্যায়েও একই ব্যবস্থা চালু করতে হবে; পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে; সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচনী এলাকাকে বড় মনে হলে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫ জন সদস্য এবং ৫জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হবেন। পরে তাদের ভোটে তাদের ভেতর থেকেই একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান আসন সংরক্ষণ পদ্ধতির বিধান করা যেতে পারে। ওয়ার্ডের পরিধিও জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে; মাননীয় সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদের উপদেষ্টা রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে হবে; চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান পরিবর্তন করতে হবে অথবা সকল ধরনের জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে একই ধরনের বিধান প্রবর্তন করতে হবে।

জেলা পরিষদের নবনির্বাচিতদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪৫ জনের (৭৬.২৭%) শিক্ষাগত যোগ্যতা ¯œাতক বা স্নাতকোত্তর। এসএসসি বা তার কম শিক্ষাগত যোগ্যতাস¤পন্ন রয়েছেন ৫ জন (৮.৪৭%) জনের। ৪ জনের (৬.৭৭%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির কম।’ পেশার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮ (৬৪.৪০%) জন প্রার্থীর পেশা ব্যবসা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ (১৩.৫৫%) আইনজীব। অন্যান্য নির্বাচনের মত জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২ জনের (৩.৩৮%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৫ জনের (২৫.৪২%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১ জনের (১.৬৯%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে ফৌজদারি মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় অতীতে মামলা ছিল ২ জনের (৩.৩৮%) বিরুদ্ধে। এই দুইজন হচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের চেয়ারম্যান জনাব মো: মহিউদ্দিন এবং মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব মো: গোলাম রসুল। প্রতিবেদনে বলা হয়, নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২২ জন (৩৭.২৮%) বছরে ৫ লক্ষ টাকার নীচে আয় করেন। বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন ৩ জন (৫.০৮%)। ৯ জনের (১৫.২৫%) স¤পদ ৫ লক্ষ টাকার নীচে। কোটির টাকার অধিক স¤পদের মালিকও রয়েছেন ৯ জন (১৫.২৫%)। নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র ৪ জন (৬.৭৭%) ঋণ গ্রহিতা।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ