ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে এবার যৌতুকের মামলা
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে এবার যৌতুকের মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী দাবিদার সেই নাসরিন সুলতানা। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. রায়হান উল ইসলামের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মো. আনোয়ারুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামী করা হয়েছে আরাফাত সানি ও তার মা নার্গিস আক্তারকে। মামলার বাদীসহ চারজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. কামাল উদ্দিন। বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষে আরাফাত সানিকে আগামী ৫ এপ্রিল সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া তার মা নার্গিস আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে ৩২ নম্বর দক্ষিণ কুনিপাড়ায় আসামী আরাফাত সানি বাদীর কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামী বাদীকে ভাড়া বাসায় একা রেখে চলে যান।
মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাঁচ লাখ এক টাকা দেন মোহরে তাদের বিয়ে হয়। এরপর বাদীর বোনের বাড়িতে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার শুরু করেন। তবে বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতে আসামী ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। গত বছরে ২৩ ডিসেম্বর যৌতুকের টাকা না দিলে ও বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি খারাপ হবে এবং তাদের অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন আরাফাত সানি। এরপর বাদী ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মামলার বিবরণীতে দ্বিতীয় আসামী ও আরাফাত সানির মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, যৌতুক না দিলে তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না এবং তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেবেন না বলে দ্বিতীয় আসামী হুমকি দেন এবং গালাগালি করেন।
বিয়ের কাবিননামার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন: এদিকে ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে আরাফাত সানির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কারণে সেই তরুণীর সঙ্গে সানির সম্পর্ক এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সানি ও সেই তরুণী গোপনে বিয়ে করেছিলেন। সানির সাথে সেই তরুণীর বিয়ের প্রমাণ হিসেবে একটি কাবিননামা আদালতে দাখিল করা হয়। যদিও সানি এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে বরাবরই সেই বিয়ের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে। কাবিননামার কপিটি ইতিমধ্যেই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। কাবিননামা আসল তো? কাবিননামায় উল্লেখ, ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে আরাফাত সানির সঙ্গে নাসরিনের বিয়ে হয়। এতে আরাফাত সানির বয়স দেয়া হয়েছে ২৮ বছর আর কনের বয়স দেয়া হয়েছে ২১ বছর। কাজীর নাম হিসেবে দেয়া আছে মো. আনোয়ার হোসেন। উল্লিখিত কাজী আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাবিননামাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
কারণ, কাবিননামায় তার অফিসের ঠিকানা হিসেবে দেয়া আছে ২০/বি, মেরাদিয়া, থানা খিলগাঁও, জেলা ঢাকা। আনোয়ার হোসেনের অফিস খিলগাঁও হলেও এই ঠিকানায় নয়। জানা গেছে, উল্লিখিত ঠিকানায় কোনো কাজী অফিস পাওয়া যায়নি। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঠিকানায় কোনো কালেও কোনো কাজী অফিস ছিল না! এ ছাড়া কাবিননামার কপিটি দেখে আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষর ও সীলমোহর তার নয় বলে জানান। কাবিননামার সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। একই সাথে আলামত হিসেবে জব্দ করা সেই তরুণীর মোবাইল ফোনটিও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গোপনে বিয়ে করেও কালক্ষেপণ এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের অন্তরঙ্গ ছবি আপলোড করার অভিযোগ এনে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলায় রোববার ভোরে নিজ বাড়ি সাভারের আমিন বাজার থেকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ । এ মামলায় গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে আছেন। একদিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।