শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় কাল

স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচজন করে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। আগামী মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বরাবর এ নামগুলো জমা দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এদিকে সার্চ কমিটি কাল সোমবার বিকাল চারটায় ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত নেবেন।
সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম এলে ১৫৫টি নাম জমা পড়বে সার্চ কমিটির কাছে। এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে নাম আসলে নামের সংখ্যা বাড়বে। জমা পড়া নাম থেকে যাচাই বাছাই করে নাম চূড়ান্ত করবেন সার্চ কমিটি।
গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নির্বাচন কমিশনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক উপলক্ষে সকাল ১১টার আগে থেকে সদস্যরা আসতে থাকেন সুপ্রিম কোর্টে। সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচজন করে নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে দেশের ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড.মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড.শিরীণ আখতার অংশ নেন।
১২ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন
আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের প্রাক্তণ বিচারপতি আবদুর রশীদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এস এম এ ফায়েজ, তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইনজীবী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড.আবুল কাসেম ফজলুল হক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। সে কমিটির প্রথম সভা সকাল ১১টায় শুরু হয় এবং তা প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা চলে। কমিটির সকল সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিটির কর্মপদ্ধতি কী হবে-সেটা নির্ধারণ করা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সভায় প্রথম সিদ্ধান্ত হলো যেসব রাজনৈতিক দল মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কাছে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য নাম চেয়ে চিঠি দেয়া হবে। তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আগামী ৩১ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও বিধি) কাছে জমা দেয়ার জন্য। সভার দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো আগামী সোমবার বিকেল চারটায় জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।
মন্ত্রি পরিষদ সচিব এরপর ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন নির্ধারিত ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রম শেষ হবে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কমিশন পাওয়া যাবে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তিন জনের মেয়াদ শেষ হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। একজন সদস্যের ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হবে। ২০১২ সালে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন। ওই সার্চ কমিটির প্রধানও ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন। সংলাপের শুরু হয় গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ৩১টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়।
গত ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটির গঠন করে একটি চিঠি বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। বঙ্গভবনের চিঠি পাওয়ার পর সার-সংক্ষেপ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখান থেকে ফাইল ফেরত আসার পর সন্ধ্যায় ছয় সদস্যের সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ