শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঢাকা মহানগরীতে শব্দদূষণ মানমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মহানগরীর নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণেরও বেশী। আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণেরও বেশী এবং রাতে মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই গুণের বেশী। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণেরও বেশী এবং রাতের বেলায় মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণেরও বেশী। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশী।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কলাবাগানে নিজস্ব মিলনায়তনে বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত “ঢাকা মহানগরীতে শব্দ দূষণের বর্তমান চিত্র ও করণীয়” শীর্ষক এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ উদ্বেগজনক তথ্য জানানো হয়। পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত, পবা’র সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, বিসিএইচআরডি’র সভাপতি মাহবুবুল হক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ। 

সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, পবা সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্ব রোড, মহাখালী, ফার্মগেট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পান্থপথ, ধানমন্ডি ২৭, কলেজ গেইট, শ্যামলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর। জরিপকৃত স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। নীরব এলাকায় দিবাকালীন, আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন, মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন এবং বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন সময়ে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এছাড়া বাসের ভিতর সামনে ও পিছনে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৩ দশমিক ৩ থেকে ১০৪ দশমিক ৪ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৯২ দশমিক ২ থেকে ৯৭ দশমিক ৮ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৬৮ দশমিক ৭ থেকে ৮৩ দমমিক ৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৮৫ দশমিক ৭ থেকে ১০৫ দশমিক ৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৫ দশমিক ৭ থেকে ১০৬ দশমিক ৪ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯৪ দশমিক ৩ থেকে ১০৮ দশমিক ১ ডেসিবল। বাসের ভিতর শব্দের মাত্রা সামনে ৯৩ দশমিক ৬ থেকে ৯৫ দশমিক ২ ডেসিবল ও পিছনে ৮৪ দশমিক ৬ থেকে ৮৫ দশমিক ৪ ডেসিবল। বাংলামটরে এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজানোকালে শব্দের মাত্রা ১১০ দশমিক ১ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৫ দশমিক ৮ থেকে ৯৬ দশমিক ৭ ডেসিবল।

মেপে দেখা যায়, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ইডেন মহিলা কলেজের সামনে যা ১০৪ দশমিক ৪ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি পল্টনে যা ১০৫ দশমিক ৫ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি কলাবাগানে যা ১০৬ দশমিক ৪ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি এয়ারপোর্টের সামনে যা ১০৮ দশমিক ৯ ডেসিবল।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন সে আর স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পায় না। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারী ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে। 

পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। নীরব এলাকা হচ্ছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি এবং এর চারপাশের ১ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোন প্রকার হর্ণ বাজানো এবং মোটর, নৌ বা অন্য কোন যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ণ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর কোন প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদফতর, স্থানীয় সরকার, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর ন্যস্ত আইনসিদ্ধ দায়িত্ব ও কর্তব্য আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সেই সাথে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা প্রয়োজন। 

এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নিজ এলাকার মধ্যে নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প বা মিশ্র এলাকা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করাও জোর দাবি জানান আবদুস সোবহান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ