শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শিক্ষিতদের ধরে নিয়ে গুম এবং বিত্তবানদের নির্যাতন করে চাঁদা আদায় করা হয়

কমরুদ্দিন মুকুল, উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, কফি আনান কমিশন ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের মংডু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ছিন্নভিন্নহীন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া গ্রামগুলো পরিদর্শন করায় বর্মী সেনারা রোহিঙ্গা নির্যাতনের ধরন পরিবর্তন করেছে। এবার তারা শিক্ষিত লোকজনদের ধরে নিয়ে গুম করছে। পাশাপাশি অর্থ ও বিত্তবানদের আটক করে মুক্তিপণ আদায় করছে। অন্যথায় অমানুষিক নির্যাতন করে তাৎক্ষণিক সাজা দিয়ে জেলে পুরছে। গতকাল শনিবার ভোর রাতে বুচিদং, নাইচ্ছাখালী ও ঢেকিবনিয়া থেকে সপরিবারে পালিয়ে এসে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া গ্রামের হুক্কাট্টা স্থানীয় ভাষায় চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন (৪৫) এর সাথে কথা হয় কুতুপালং নতুন বস্তির ঝুঁপড়িতে বসে। সে তার ছবি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোন দিন যদি মিয়ানমারে ফেরত যেতে হয় ছবি প্রকাশের জের ধরে বর্মী সেনা পুলিশ তাকে মেরে ফেলবে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের  পৈশাচিক নির্যাতনের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গভীর রাতে পালিয়ে এসে বস্তিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তিনি জানান, ঢেকিবনিয়া এলাকায় তার প্রায় ৫০ একর চিংড়ি চাষ শত শত একর জমি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য, দোতলা বিশিষ্ট বাগান বাড়ি সহ কাঠের তৈরি বাড়িঘর ফেলে জীবন বাঁচাতে পরিবার পরিজন নিয়ে চোরের মতো পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত ঢেকিবনিয়া গ্রাম এত কাছে সত্ত্বেও দেরিতে কেন চলে আসলেন জানতে চাওয়া হলে ওই হুক্কাট্টা (চেয়ারম্যান) বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বর্মী সেনা পুলিশ ও রাখাইন যুবকেরা তার নিকট থেকে দফায় দফায় টাকা আদায় করছে। চিংড়ি ঘেরে লুটপাট চালিয়ে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। গোয়ালঘর থেকে গরু, ছাগল, মহিষ লুটপাট করেছে। এরপরও তারা বাড়ির আনাচে কানাচে সার্বক্ষণিক অবস্থান করায় তার মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। মনে হচ্ছিল তার বাড়িসহ সপরিবারে পুড়িয়ে মারার একটি পরিকল্পনা বর্মী সেনারা নিয়েছে। তাদের সোর্স হিসাবে থাকা আপনজনদের পরামর্শে রাতের আঁধারে ঢেকিবনিয়া খাল পার হয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। মিয়ানমার সরকার যদি রোহিঙ্গাদের ফিরে নিতে কোন দিন সম্মত হয়, দেশের বাড়িতে ফিরবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে হুক্কাট্টা দিলদার হোসেন জানান, তার উপরে মিয়ানমার প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। তাই ফিরে গেলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর মংডুর তিনটি সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় সেখানকার সেনা সদস্য বিজিপি ও রাখাইন যুবকেরা মংডুর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা-, লুটপাট সহ নারকীয় হত্যাকা- ও  পৈশাচিক নির্যাতন চালালেও ঢেকিবনিয়া এলাকায় এর প্রভাব পড়েনি। গত সপ্তাহ কাল ধরে বর্মী সেনারা তার উপর নজরদারি বৃদ্ধি করে দফায় দফায় চাঁদাবাজি ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। মরিচ্যা বিল থেকে আসা তকলিমা খাতুন (২০) জানায়, তার স্বামী ইসমাঈল (২৫) কিছু কিছু লেখাপড়া করেছে। সে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বর্মী সেনারা বাড়ি ঘেরাও করে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
কুতুপালং বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, বর্মী সেনা পুলিশ ও রাখাইন যুবকেরা নির্যাতনের ধরন পাল্টিয়ে শিক্ষিত যুবকদের অপহরণ করে গুম করছে আর বিত্তবানদের আটক করে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ হিসাবে আদায় করছে। যে কারণে এ ধরনের রোহিঙ্গা বর্তমানে অনুপ্রবেশ করছে। যারা এতদিন চোখবুঝে নীরবে নিভৃতে তাদের অত্যাচার উৎপীড়ন সহ্য করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ