শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বগুড়ার পোড়াদহ মেলায় সোয়া লাখ টাকার মাছ ॥ ২০ কেজি ওজনের মিষ্টি

গতকাল বুধবার বগুড়া গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলায় ৮৫ কেজি ওজনের এই বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকা হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা

বগুড়া অফিস: বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা দামের বাঘাইড় মাছ এবং ২০ কেজি ওজনের মিষ্টির আমদানি হয়েছে। দুই দিনের এই মেলার প্রথম দিন গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হলো জামাই মেলা এবং আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বউ মেলা। এবার মেলায় বাঘাইড় মাছের ওজন ছিল ৮৫ কেজি। দাম হাঁকা হয়েছে ১৫শ’ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা। তবে দুপুর পর্যন্ত ১২শ’ টাকা কেজি দাম বলেছেন ক্রেতারা। এছাড়া মেলায় উঠেছিল ১০ কেজি ওজনের বোয়াল, ৪০ কেজি ওজনের কাতল, ১০ কেজি ওজনের রুই, ১৫ কেজি ওজনের পাঙ্গাস মাছ। মেলার অন্যতম আকর্ষণ একটি মিষ্টির ওজন ছিল ২০ কেজি।
স্থানীয়রা জানান, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতি বছর বসে এই মেলা। প্রায় চারশ’ বছর আগে বগুড়া-চন্দনবাইশা সড়ক সংলগ্ন পোড়াদহ খালের পাড়ে এক বিশাল বটবৃক্ষের নিচে আয়োজন করা হতো সন্ন্যাসী পূজার। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। পোড়াদহ নামক স্থানে হয় বলে এ মেলার নাম হয়ে যায় পোড়াদহ মেলা। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করে থাকেন। তাদের সাথে নিমন্ত্রণ দিয়ে থাকে স্বজনদেরও। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ মেলাকে জামাই মেয়ে বলে থাকেন।
গত বছরের পরে এবছরও একটি ২০ কেজি ওজনের মিষ্টি বিক্রি হয়েছে। পাশের সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের দোকানে এ মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকায়। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় বিক্রি হয়েছে। মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী অন্তত ২০ গ্রাম আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এবারের সবচেয়ে বড় ৮৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটি নিয়ে আসেন গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী দুখু মিয়া। রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে আনা মাছটি পদ্মা নদীর বলে তিনি জানান।
গাবতলী উপজেলার মড়িয়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা ইসলাম জানান, এবারের মেলায় তিনি ৪০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছটির দাম হাকা হয়েছে ২০০০ টাকা কেজি দরে ৮০,০০০ টাকা। তিনি বলেন, মেলায় বিভিন্ন সাইজের মাছ রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত।
মেলাকে ঘিরে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষ করে মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি চলে আনন্দ উৎসব। মেলায় যেমন মাছের আকর্ষন তেমনি বাড়ি বাড়ি জামাই আকর্ষণ। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনেছে তা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। জামাইরা একে অন্যের বাড়ি বেড়াতে যায় মিষ্টিহাতে। আবার জামাইদের হাতে বাড়ির বড়রা নগদ অর্থ তুলে দিয়ে থাকে। সবাই সবার জন্য কেনাকাটা করে। আজ বৃহস্পতিবার একই স্থানে বসবে বউ মেলা। এ মেলায় বাড়ির গৃহিণী বা মহিলাদের জন্য আয়োজন হয়ে থাকে। গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.ন.ম আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলার কয়েকদিন আগে থেকেই বিক্রেতারা ভিড় করতে থাকায় থানা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা ছিল। ফলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মেলাটি উদযাপিত হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ