মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

লোকসান গুণছেন বায়াররা গলদা চাষিরা দুশ্চিন্তায়

খুলনা অফিস : পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে। গলদা চিংড়ির বাজার দর এখন সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। এ কারণে বৃহত্তর খুলনা জেলার প্রায় তিন লাখ গলদা চাষি হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
মৎস্য পরিচালন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, যুক্তরাজ্য ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইএইউ) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেননা ওই দেশটিতে বাংলাদেশের ৮০ ভাগ গলদার চাহিদা।
তিনি আরও জানান, ইউরো’র থেকে পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ায় সে দেশের সামুদ্রিক বন্দর ও ওয়্যার হাউজে গত কয়েক মাসে যে গলদা জমা পড়েছে, এ পণ্য ছাড়াতে ও দেশের বায়ারদের কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ ডলার পর্য়ন্ত লোকসান গোনার আশঙ্কা রয়েছে।
এর ফলে তারা বন্দরেই পণ্য ফেলে রেখেছে। কোন কোন বায়ারকে তাদের বন্দর থেকে গলদা খালাস করতে ৫০ ভাগ পর্যন্ত লোকসান গুণতে হবে। এদিকে যুক্তরাজ্যে গলদার অস্বাভাবিক দর পতনের কারণে দেশের প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমির কয়েক লাখ চাষি ক্ষতির মুখে রয়েছেন। যে গলদা এক সময় প্রতি কেজি ১৯শ’ টাকা দর উঠেছিল, তা এখন সাতশ’ থেকে তিনশ’ টাকায় নেমে এসেছে।
ফিস ফার্মওনার্স এসোসিয়েশনের (ফেয়াব) বাগেরহাট জেলার সভাপতি মো. ইয়ামিন আলী জানান, গলদার বৈদেশিক দরপতনে বৃহত্তর খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এভাবে দরপতনে আগামী বছর এ অঞ্চলের চাষিরা গলদার চাষে বিমুখ হবে। এই বিরাট সংখ্যক চাষিদেরআর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
কেশবপুরের কাটাখালির সততা মৎস্য ভান্ডারের মালিক বুদ্ধদেব বিশ্বাস জানান, গত তিন মাসের বাজার দরের পতনে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পর্যায়ে এসে পড়েছে। ৬ হাজার টাকার রেণু কিনে চাষের খরচ খাবার দিয়ে প্রতি ঘেরে এ অঞ্চলে চাষিরা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণছে। তিনি জেনেছেন বিদেশে গলদার দর কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা লাটে উঠতে বসেছে।
খুলনা নতুন বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী স্বপন কুমার দাস জানান, চলতি বছর ১৫ থেকে ৪ গ্রেড পর্যন্ত গলদার দর ৬১০ থেকে ১৬৯০ টাকা পর্যন্ত কেনা বেচা হচ্ছে। মাছ কিনে কোম্পানিতে সরবরাহ করে তারা ২ মাস পেমেন্ট পাচ্ছেন না। মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা এর চেয়ে কমে গলদা বিক্রি করে লোকসান গুণছেন। কোম্পানিগুলো বলছে, শিপমেন্ট হচ্ছে না, বিদেশী বায়াররা নতুন করে গলদা কিনছেনা। গত নবেম্বর থেকেই গলদার বাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। গলদার আন্তর্জাতিক দরপতনের বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর বলেন, ইউরো থেকে পাউন্ডের দাম কমে যাওয়ায় সে দেশে সিংহ ভাগ ক্রেতা এ বছর লোকসানের আশংকায় বাংলাদেশ থেকে গলদা কেনা বন্ধ করেছে। গত বছরও তারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল। এর ফলে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকসহ চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন। তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন বাজার পাওয়ার চেষ্টায় আছি। ইতোমধ্যে জাপানে প্রথমবারের মত ১৫ কন্টেইনার গলদা রপ্তানি করা হয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজার খোঁজা হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চে বোস্টনে ফিস ফেয়ারে, এপ্রিলে ব্রাসেল্স এ গোল্ডবাল সি ফুড এক্সপোতে সরকার ও বেসরকারি মাছ কোম্পানিগুলো অংশ গ্রহণ করবে। এর উদ্দেশ্য নতুন বাজার  সৃষ্টি করা। এ বিষয়ে তিনি মৎস্য, পররাষ্ট্রসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আর তৎপরতা বাড়ানোর কামনা করেছেন। দ্রুত এ সেক্টরে হারনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ