ঢাকা, শুক্রবার 19 April 2024, ০৬ বৈশাখ ১৪৩০, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

ভোলায় বাঁধের পাড়ে সবজি চাষ করে বাড়তি আয়

অনলাইন ডেস্ক : ভোলা জেলার সদর উপজেলায় বেড়িবাঁধের পাশে পতিত জমিতে সবজি চাষের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের নির্দিষ্ট চলার পথের বাইরে অবশিষ্ট অংশে লাউ, কুমোর, করলা, শিম, বটবটি, মূলা, পেঁপে, বেগুন, বিভিন্ন শাক, কলা চাষ করছেন এখানকার শতাধিক পরিবার। বিকল্প আয়ের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে অনেকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। মেঘনা পাড়ের ভিটে-মাটি হারানো অসহায় পরিবারগুলো দারিদ্র্যকে জয় করছেন সবজি আবাদের মাধ্যমে। নিজেদের জমি না থাকায় পরিত্যক্ত জমিতেই বিভিন্ন শস্যের পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।

ধনীয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তুলাতুলী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের পরিত্যক্ত স্থানে বিভিন্ন সবজি চাষ করা হচ্ছে। যার ঘরের পাশে যতটুকো শূন্য স্থান প্রায় সবটাতেই সবজি চাষ হচ্ছে। সাধারণত বাঁধের যে অংশ নদীর দিকে নেমে গেছে সেখানে মাঁচা তুলে লাউ, কুমোর, করলা, শিমসহ নানান সবজির চাষ হচ্ছে। ঘরের চালায় লক লক করছে কচি লাউয়ের ডগা। কোন ধরনের রাসয়নিক সার ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সার প্রয়োগে এখানে এসব সবজি উৎপাদন করা হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সবজির কাজে অংশ নিতে দেখা যায়।

মো: নুরে আলম (৪৫) বাসস’কে বলেন, তিনি নদীতে মাছ ধরেন। শীত মৌসুম হওয়ায় নদীতে তেমন একটা মাছ নেই। তাই বাঁধ ও নদী পাড়ের পরিত্যক্ত অংশে লাউ, কুমোর, মুলা, মশাড়ি ও ফেলন ডালের আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ২ হাজার টাকার লাউ, কুমোর ও লাউ শাক বিক্রি করেছেন। কিছুদিন পর ডাল ঘরে তুল্লে আরো লাভ হবে বলে জানান তিনি।

দরিদ্র পান বিক্রেতা কামাল হোসেন স্ত্রী বিবি ফাতেমা। টানাটানির সংসারে ছেলে মেয়ে ও শাশুড়ি নিয়ে থাকেন। তাদের মূল বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বহু আগে। ফাতেমা বাড়তি আয়ের জন্য ঘরের পাশে করলা, লাউ, বেগুন, শিম ও বটবটি চাষ করছেন। এতে করে একদিকে যেমন পরিবারের চাহিদা মিটছে, অন্যদিকে বিকল্প আয় হচ্ছে সংসারে। ফাতেমা শিম, বেগুন, লাউ ও করলা বিক্রি করেছেন ৪ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান বিবি ফাতেমা। 

নাছির মাঝি এলাকার ইউনুছ আলী ও রুস্তম মাঝি বাঁধের পাশের অংশে পেঁপে ও কলার চাষ করছেন। গত মাসে তারা ১০ হাজার টাকার কলা ও পেঁপে বিক্রি করেছেন। প্রতিমাসেই তাদের কলা ও পেঁপে বিক্রিতে ভালো টাকা লাভ থাকছে। মাছ ধরার পাশাপাশি সবজি চাষ বদলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্য। তাদের ছেলে মেয়েরা এখন নিয়মিত ইস্কুলে যাচ্ছে।

মেঘনার বাঁধের পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত বছর সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় শক্ত ব্লকের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের ২ পাশের নিচু জমিতে নদী ভাঙ্গনের শিকার কয়েকশত দরিদ্র পরিবারের বসবাস। দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা এসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্য মাছ ধারা অথবা দিনমজুরের কাজে নিয়োজিত। 

বাঁধের পরিত্যক্ত ও বর্ধিত অংশে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে। তাই ভূমিহীন পরিবারগুলো শুষ্ক মৌসুমের প্রথম দিক থেকে সবজি চাষ শুরু করে। এসব সবজিতে কচুরিপানা, গোবর সার, পানি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পোকা-মাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ কম থাকার কারণে রাসয়নিক সার ব্যবহার হয় না। বাঁধের বাইরের অংশে শোভা পাচ্ছে লাউ, করলা, কুমোর, শিম ইত্যাদি মাঁচা। বাতাশে তীর তীর করে কেঁপে উঠে সবুজ সবজির সমারোহ।

সিরাজ মাঝি (৭০) বলেন, এখানকার কয়েকশ’ পরিবার বর্তমানে স্বল্পকালীন সবজির চাষ করছেন। মাটিতে পর্যাপ্ত পলী থাকায় সবারই মোটামুটি ফলন ভালো হয়েছে। এতে করে মাছ (ইলিশ) না থাকার এই সময়টাতে সবজি চাষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। 

উন্নয়ন কর্মী নওশাদ হোসেন মুন বাসস’কে জানান, সমাজের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো বাঁধের পাড়ে বসবাস করছে। এখানে সবজি চাষের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলো সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে। সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রশংসার দাবিদার। আর প্রত্যেকের ঘরের পাশে সবজি চাষ হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণও বাড়ছে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রসান্ত কুমার সাহা বলেন, সবজি চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের যেসব কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন তা দেয়া হচ্ছে। এখানে নদী পাড়ের মাটি উর্বর বিধায় সবজি ফলন ভালো হয়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে বাঁধের যেন কোন ক্ষতি না হয়। সূত্র: বাসস। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ