দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে খুলনা শিপইয়ার্ড
খুলনা অফিস: দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখছে খুলনা শিপইয়ার্ড। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক স্বচ্ছতা কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি শ্রমিক কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এক সময় রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ঘোষিত খুলনা শিপইয়ার্ড এখন দেশের অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৭ সালের ২৩ নবেম্বর। শুরুতে কিছুটা লাভজনক হলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের কারণে শিপইয়ার্ড পরিণত হয় চরম লোকসানী প্রতিষ্ঠানে। এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে রুগ্ন শিল্প ও ঘোষণা করা হয়। তখন চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এখানকার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে। তবে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাবনাময় এ শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং দেশের অর্থর্নীতিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা ও এর সার্বিক নিরাপত্তার গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৯ সালের অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর থেকেই ঘুরে দাড়ায় খুলনা শিপইয়ার্ড। যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত, শ্রমিক কর্মচারীদের ফলে, ক্রমেই শিপইয়ার্ড লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। এরই মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে নৌবাহিনীর জন্য পাচটি যুদ্ধ জাহাজ এলপিসি সফলভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী ছোট বড় জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, সময়মত হস্তান্তর ও শ্রমিক কর্মকর্তাদের দক্ষতায় খুলনা শিপইয়ার্ডের উপর আস্থা বেড়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
তিনি আশা করেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে খুলনা শিপইয়ার্ড।
কমডোর কামরুাল হাসান আরো জানান, এ পর্যন্ত খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে ৭৫ মিটার লম্বা দু’টি কার্গো ও কন্টেইনার ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটিসহ ৭১৯ টি জাহাজ নির্মাণ ও ২২১৯টি জাহাজ মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে ১৪ টি জাহাজের নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিআইডব্লিউটিসি’র কন্টেনার ভেসেল উদ্বোধন এবং সোমবার নৌবাহিনীর জন্য হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে ভেসেলের কিললেয়িং ও সাবমেরিন টাগ বোটের উদ্ধোধন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা শিপইয়ার্ডে দক্ষতার সাথে কাজ করছে। যা খুলনা শিপইয়ার্ড তথা খুলনাবাসীর একটি গৌরবের ব্যাপার।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বে এই মুহূর্তে জাহাজ নিমার্ণে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক শতাংশ কাজও যদি বাংলাদেশের জন্য আনা যায় তাহলে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বাজার দেশে সৃষ্টি করা সম্ভব। যা দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই সম্ভাবনাময় এ শিল্পের জন্য সরকারি বেসরকারি সব পর্যায় থেকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্র জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল জনযান খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে খুলনাসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে খুলনা শিপইয়ার্ড। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ডের লাভের পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে লাভের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এদিকে খুলনাঞ্চলের সর্বোচ্চ করদাতাও খুলনা শিপইয়ার্ড। এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ১৫শ’ শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। শিপইয়ার্ডের উদ্যোগে স্কুল এন্ড কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা ও টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট পরিচালিত হচ্ছে।