খুলনার খালিশপুরে ‘পাওয়ার পল্লী’ হচ্ছে
খুলনা অফিস: খুলনার খালিশপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। কেন্দ্রের অভ্যন্তরেই গড়ে তোলা হবে ‘পাওয়ার পল্লী’। এ পরিকল্পনা নিয়েই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিদায়ী বছরের ২২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ টাকা। পর্যায়ক্রমে এখানেই আরো দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ করা হবে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়ন হলে খুলনার মৃতপ্রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য।
খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরাতন ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আর ওভারহোলিং না করার কারণে ধুকে ধুকে চলা ১১০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এ দু’টি কেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে। এতে কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়ে।
খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (পরিচালন) রেজাউল করিম পদ্ম জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উজ্জীবিত করতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। এখানেই গড়ে তোলা হবে ‘পাওয়ার পল্লী’। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৫০ একর জমি রয়েছে। এ জমিতেই ধাপে ধাপে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে প্রথমধাপে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে প্রায় ১০ একর জমিতে ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। এ প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘খুলনা ২০০-৩০০ মেগাওয়াট (ডুয়েল ফুয়েল) কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প’।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের নাম ‘দুই থেকে তিনশ’ মেগাওয়াট’ দেয়া হলেও এটি জ্বালানী তেলে চললে ৩৩৫ মেগাওয়াট এবং এলএনজি গ্যাসে ৩৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এটি (ডুয়েল ফুলেয়) কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে গ্যাস অথবা ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এটির ইফিসিয়েন্স ৫৮ শতাংশ। যে কারণে ইউনিট প্রতি তেলের পরিমাণ কম লাগবে। ডিজেল দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় দাঁড়াবে মাত্র সাড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা। আর গ্যাসে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়ও কম হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের কাজ পেয়েছে চীনের ‘কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব হার্বিং ইলেকট্রিক ইন্টার্যাশনাল লিমিটেড এবং জিয়ানশু ইটার্ন কোম্পানি লিমিটেড’।
এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এখন ব্যাংক লোন এ্যাগ্রিমেন্ট বাকী রয়েছে। এরপরই কাজ শুরু হবে।
জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ (বি-১৯০২) খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র শাখার সাধারণ সম্পাদক সরদার মনিরুজ্জামান বলেন, খুলনার ৬০ ও ১১০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দু’টি ওভারহোলিং না হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা হতাশার মধ্যে ছিলো। কিন্তু সরকারের মহাপরিকল্পনায় সেই হতাশার দূর হয়েছে।
প্রকল্পটি বান্তবায়ন হলে মৃতপ্রায় খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। ফিরবে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।