শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাশন

২৬ ফেব্রুয়ারি, বিবিসি/এএফপি/রয়টার্স : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি হায়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্সে কিছু সাংবাদিককেও নিষিদ্ধ করছে। এই পরিস্থিতিতে মনে কৌতূহল তৈরি হওয়া স্বাভাবিক যে, যে সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসে বসে প্রতিদিন প্রেসিডেন্টের খবরাখবর সংগ্রহ করেন, তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের পেশাগত সম্পর্কটা কেমন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বড় বড় সংবাদ-মাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্টের খবর সংগ্রহের জন্য নিয়োজিত থাকেন। ফলে সাংবাদিকদের অবগতির জন্য সেখানে প্রায় প্রতিদিনই ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা থাকে। প্রেসিডেন্টরাও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই তিনি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে তীব্র বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। আগের প্রেসিডেন্টদের আমলে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকরা কিভাবে কাজ করেছেন? তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক কেমন ছিল?
ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি’র ফটো সাংবাদিক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন বাংলাদেশি সাংবাদিক জুয়েল সামাদ। বিবিস বাংলার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে প্রায় প্রতিদিনই প্রেস ব্রিফিং হয় এবং সেখানে সাধারণত প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি কথা বলেন। এটি ‘অন ক্যামেরা’ এবং ‘অন রেকর্ড’ প্রেস ব্রিফিং। অর্থাৎ এখানে ছবি তোলা যাবে, কথা রেকর্ড করা যাবে। হোয়াইট হাউসে ঢোকার পাস বা প্রেস কার্ড আছে- এমন যে কোন সাংবাদিক এই সংবাদ সম্মেলন কভার করতে পারেন।’
তিনি জানান, ‘ব্রিফিং রুমে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন থাকে। সামনের সারিতে বসেন নিউইয়র্ক টাইমস বা সিএনএন- এর মতো মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা।
তিনি বলেন, ‘প্রসিডেন্টের কোন অনুষ্ঠানে কোন সাংবাদিকরা যাবেন বা যোগ দেবেন, কে আগে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন, এসব সাধারণত নির্ধারিত হয় হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন এবং প্রেসিডেন্টের প্রেস অফিসের মধ্যে আলোচনা-সহযোগিতার মাধ্যমে। এটা বহুদিনে গড়ে উঠা একটা অলিখিত রীতি বা ব্যবস্থা।’
‘যদি ফটোগ্রাফারদের কথা বলি, তাদের জন্য একটা ‘ট্রাভেল পুল’ আছে। আমি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করি, সেই এএফপি সহ রয়টার্স, এপি এবং নিউইয়র্ক টাইমস এই ট্রাভেল পুলের অংশ। এর মানে হলো, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের যে কোন অনুষ্ঠান কভার করার ক্ষেত্রে এই চারটি প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে। যে কোন লাইনে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের পর অন্য সাংবাদিকরা সুযোগ পাবেন।’
হোয়াইট হাউসের কোন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মধ্যে কারা কি প্রশ্ন করতে পারবেন, সেটা কিভাবে নির্ধারিত হয়?
জবাবে সামাদ জানান, নিত্যদিনের ব্রিফিং এ প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি তার পছন্দমত যে কোন সাংবাদিকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে পারেন। তখন সেই সাংবাদিক তার যেমন খুশি প্রশ্ন তাকে করতে পারেন। এখন হোয়াইট হাউসে যে ঘটনাটি ঘিরে তীব্র বিতর্ক চলছে, সেটি ঠিক প্রেস কনফারেন্স নয়, এটাকে বলা হয় ‘প্রেস গ্যাগল’। প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি বাছাই করা কিছু সাংবাদিককে ডেকে এই ব্রিফিং এর আয়োজন করেন। সেটি ‘অন ক্যামেরা’ হতে পারে, আবার ‘অফ ক্যামেরা’ও হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, প্রেস গ্যাগল সাধারণত অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিং এর মতো। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট নিজেও হাজির হন এরকম ব্রিফিং-এ। তিনি শুরুতেই বলে দেন, আমি এমনিতেই কথা বলতে এসেছি। এটা অফ দ্য রেকর্ড।’
মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের যেভাবে একটি ব্রিফিং এ নিষিদ্ধ করা হলো, সেটা কি আগে কখনো হয়েছে?
এ সম্পর্কে সামাদ বলেন, ‘না। আমার অভিজ্ঞতায় আমি এটা দেখি নি। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের ভেতরে এটা কখনো হয় নি। হোয়াইট হাউসের বাইরে আমরা যখন ভ্রমণ করছি, তখন অনেক সময় কেবল ট্রাভেল পুলের সাংবাদিকদের ব্রিফিং- এ ডাকা হয়। তখন কিš‘ বলে দেয়া হয় যে এটা একটা গ্যাগল।’
যেভাবে এখন হোয়াইট হাউসে কিছু সাংবাদিককে কোন কোন ব্রিফিং- এ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, সেটার কি প্রভাব পড়তে পারে এসব সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর?
জুয়েল সামাদ বলেন, ‘এটা যত না প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ ভালো গণতন্ত্রের জন্য মিডিয়াকে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দেয়া দরকার।’
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের কাজ করা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট থাকবে না বলেই মনে করেন তিনি। কারণ হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন একটি শক্তিশালী সংগঠন। এবং তারা একটা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
এদিকে শুক্রবার কয়েকটি সংবাদ সংস্থাকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার হোয়াইট হাউজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সান্ধ্যভোজ বর্জনের ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জমকালো এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিশিষ্টজন ও রাজনীতিবিদরা অংশ নিয়ে থাকেন। গত শনিবার এক টুইটার বার্তায় ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না বলে জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
টুইটে তিনি বলেন, ‘এবছর হোয়াইট হাউজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সান্ধ্যভোজে অংশ নিচ্ছি না। তবে সবার মঙ্গল কামনা করছি। দুর্দান্ত একটি সন্ধ্যা কাটবে বলেই বিশ্বাস।’ মিডিয়ার সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক শত্রুতা’র ধারাবাহিকতায় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ঢুকতে বাধাপ্রাপ্ত হলেন শীর্ষ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে,  প্রধান কয়েকটি মার্কিন সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে হোয়াইট হাউজে ঢুকতে দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। এদিকে শুক্রবার কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) আবারও মিডিয়াকে গণশত্রু আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ