বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নাব্যতা হারিয়ে গতিহীন উখিয়ার রেজুখাল

 

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা: কক্সবাজারের সর্বদক্ষিণে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ২৬১.৮০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রবাহমান প্রায় ১৩টি খাল শুকিয়ে মরুতে পরিণত হয়েছে। তৎমধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্গোপসাগরের মোহনা রেজুখাল অন্যতম। নাব্যতা হারিয়ে এসব খালগুলো পানিশূণ্য হয়ে পড়ার কারণে বোরো সহ রবি শস্য উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া বেগুন, মরিচ, ভেন্ডি, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি আবাদ করা হয়েছে খালের পাড়ে। কৃষকদের অভিমত খালের পানি দিয়ে তারা শাক সবজ্বি আবাদ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করবে। উদ্বৃত্ তরিতরকারি বাজারজাত করবে। রেজুখালের পাড়ে বসবাসরত কৃষক শামশুল আলম (৬০), জসিম উদ্দিন (৪৫) জানায়, বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা, মাটি, বালির পলি জমে রেজুখাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে জোয়ারভাটা হচ্ছে না। যে কারণে খালের উভয়পার্শ্বে বসবাসরত পরিবারগুলো তাদের আবাদ করা বোরো সহ শাক সবজ্বি বাঁচাতে পারবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে। অনেকেই অগভীর নলকূপ স্থাপন করেও বিফল হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয় কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন জানান, এ উপজেলার খাল গুলো কখনো ড্রেজিং করা হয়নি। উপরন্তু খাল ছড়া দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ পাহাড় কাটা মাটি ও বালিতে এসব খালগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে শুস্ক মৌসুমে খালগুলো শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহে বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে খালের দু’পাড়ে বসবাসরত অসংখ্য পরিবারকে পোহাতে হয় নানা সমস্যা। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের  তথ্যমতে মিয়ানমারের ওয়ালিদং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সৃষ্টি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী রেজুখালটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এখালে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হয়ে আসছিল এক সময়। 

পশ্চিম ডিগলিয়া রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির আওতাধীন কৃষক আব্দুর রহমান জানান, ২০০৫ সালেও রেজুখালের পানি দিয়ে ডেইলপাড়া, চাকবৈঠা, দরগাহবিল, টাইপালং, হিজলিয়া, রাজাপালং, খারাশিয়া, সাদৃকাটা, তুতুরবিলসহ বেশকিছু এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, রেজুখাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন ও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ সহ খালটি ড্রেজিংয়ের আওতায় না আনার কারণে এ খালে জোয়ার ভাটায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খালের পাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো পানির অভাবে শাক সবজি উৎপাদনসহ নিত্যব্যবহার্য্য পানি সংকটে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কৃষি অফিসার মোঃ শরীফুল ইসলাম জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে খালগুলি শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এতে বোরো উৎপাদনের কোন ক্ষতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, রেজুখাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ