শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এক যুগ পর বগুড়ার সাংবাদিক দীপংকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

বগুড়া অফিস : হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর বগুড়ার সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। জেএমবিকে নিয়ে লেখালেখির কারণেই বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের জামাতা শায়খ আব্দুল আউয়ালের নির্দেশে তাকে খুন করা হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে গ্রেফতারকৃত ঢাকার হলি আর্টিজান রোস্তোরাঁয় হামলার আসামী শীর্ষ জেএমবি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। এই হত্যাকাণ্ডে সে ছাড়াও মোট ৪ জন জেএমবি সদস্য অংশ নেয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে রাজিব গান্ধী। মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের ঘোষণা দেন।
পুলিশ সুপার বলেন, হলি আর্টিজান হামলার আসামী রাজিব গান্ধী বগুড়ার কয়েকটি জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলায় বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সে জেএমবিতে যোগ দেবার পর যেসব কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে এসবের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী হত্যায় জড়িত থাকার কথা জানায় এবং এই হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা পুলিশকে জানায়। এরপর গত সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও প্রদান করে। শেরপুর উপজেলার আমলী আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবিব তার জবানবন্দী গ্রহণ করেন। জবানবন্দীতে দেয়া রাজিব গান্ধীর স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, রাজীবের ভাষ্যমতে জেএমবি’র তৎকালীন শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুল আউয়ালের (শায়খ আব্দুর রহমানের জামাতা) নির্দেশে সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তীকে হত্যা করা হয়। দীপংকর চক্রবর্তী জেএমবি ও বাংলা ভাইকে নিয়ে  দৈনিক দুর্জয় বাংলায় নেতিবাচক লেখালেখির কারণে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। হত্যাকাণ্ডে রাজীব গান্ধিসহ আরো ৩ জন অংশ গ্রহণ করে। তারা হলো সারোয়ার জাহান মানিক, সানাউল্লা এবং নুরুল্লাহ। এদের মধ্যে মানিক সম্প্রতি আশুলিয়ায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানকালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
রাজীবের ভাষ্যমতে, বগুড়ার জহুরুলনগর এলাকার ভাইবোন নামের একটি ছাত্রাবাসে বসে ওই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যার আগে তারা শেরপুরে গিয়ে ঘটনাস্থলে রেকি করে। একইসাথে তারা দীপংকর চক্রবর্তীর গতিবিধিও লক্ষ্য করে। এরপর হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। ঘটনার আগে রাত ১০টায় জেএমবি সদস্য মানিক মোটর সাইকেলে করে সানাউল্লা ও নুরুল্লাহকে নিয়ে শেরপুরে যায়। এর আগে শহরের তিনমাথা রেলগেইট এলাকা থেকে বাসযোগে সেখানে পৌঁছে রাজীব গান্ধী। রাজীব গান্ধীর দায়িত্বে ছিল গতিবিধি লক্ষ্য করা, আর হত্যার দায়িত্ব ছিল সানাউল্লা ও নুরুল্লাহর। বগুড়া থেকে পেশাগত কাজ শেষে রাত ১২টায় সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী বাসযোগে শেরপুরে পৌঁছে জলযোগ নামের একটি হোটেলে চা খান। পরে পায়ে হেঁটে বাসায় যাওয়ার পথে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান আরো জানান, সাংবাদিক নেতা দীপংকর চক্রবর্তী গত ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর রাতে শেরপুর উপজেলার সান্যালপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে খুন হন। হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার দেহ থেকে মাথাকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। তৎকালীন সময়ে উক্ত ঘটনা বগুড়াসহ সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনার পরপরই ভিকটিম দীপংকর চক্রবর্তীর ছেলে পার্থ সারথী চক্রবর্তী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলাটি প্রথমে শেরপুর থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ ও সিআইডি তদন্ত করে পরপর তিন দফা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবারই বাদি ওইসব রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন জানান। একারণে মামলাটি পুনরায় তদন্তের আদেশ হয় এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) বগুড়ার উপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
এদিকে একযুগেরও বেশি সময় পর পুলিশ প্রবীণ সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী হত্যা রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হওয়ায় বগুড়ার সাংবাদিক সমাজ স্বস্তি প্রকাশ করে পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ