মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কেশবপুরের বহুলালোচিত চেয়ারম্যান আনিস আটক ॥ এলাকায় স্বস্তি

কেশবপুর (যশোর) সংবাদদাতা: যশোরের কেশবপুরে ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান বহুলালোচিত চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আটকের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত সোমবার রাতে এক সরকারি কর্মকর্তাকে মারপিট করার অভিযোগে ডিবি পুলিশের হাতে তিনি আটক হন। এ সময় তার কাছ থেকে ১০০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও মাদক দ্রব্য আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নির্যাতনের শিকার শতশত নারী পুরুষ ওই চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর লোকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি‘র বাসভবনে একাধিক অভিযোগ করেছেন। এদিকে, আনিস চেয়ারম্যানের আটকের খবর শুনে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম সোমবার রাতে কেশবপুর-ত্রিমোহিনী সড়ক এলাকা থেকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে যশোর নিয়ে যায়। তিনি দীর্ঘদিন নানা অনৈতিক লেবাস ধারণ করে মাদক সেবন ও ব্যবসা করে আসছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে বিভিন্ন কলাকৌশলে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মারপিটসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছেন। তার পরিষদের সদস্য দুই বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম ও ইবাদ আলী মেম্বারকে নিয়ে তিনি এলাকায় একটি বাহিনী গড়ে তুলে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সালিসের নামে সরকারি কর্মকর্তা ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের মারপিট করে আসছেন। ক্রসফায়ারে নিহত ইউনুসের অন্যতম সহযোগী আব্দুল জব্বার ওরফে জব্বার চোর, সাতবাড়িয়ার রাসেল, বরণডালির তাজমুল, আবেদ, ত্রিমোহিনীর মঞ্জুর, চাঁদড়ার গোপওয়ালা মুজিবর, শাহাপুরের শিমুল ও মন্টুসহ ১৫/২০ জনকে নিয়ে তিনি একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর জমিজমা সংক্রান্ত সালিসের নামে চেয়ারম্যান আনিস শাহাপুর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সোবহান গাজীকে ত্রিমোহিনী বাজারে প্রকাশ্যে কাঠের চলা দিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ৩ মাস চিকিৎসার পর সম্প্রতি সোবহান গাজী বাড়ি ফিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, ৩/৪ দিন আগে চেয়ারম্যানের বাড়ি এলাকায় সরকারি খাস জমিতে প্রাচীর তৈরিতে বাঁধা দেওয়ায় গত সোমবার দুপুরে চেয়ারম্যান আনিস ভূমি অফিসে ঢুকে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মলি¬¬কের মুখ চেপে ধরে বাম কানের ভেতর মোটর সাইকেলের চাবি ঢুকিয়ে র্নিযাতন চালায় ও বেদম মারপিট করে। তিনি বর্তমান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ওই কর্মকর্তার বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার পদ্মনাথপুর গ্রামে।
স্থানীয়রা জানায়, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই এলাকায় স্বঘোষিত শাসক হিসেবে ঘোষণা দেন। যার কারণে বর্তমান এলাকায় চলছে চেয়ারম্যান বাহিনীর অপশাসন। মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজি, গাছকাটা, বিদ্যুৎ দেওয়া, গাছ বিক্রি সবই আনিস বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। কোন কাঠ ব্যবসায়ী চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে ওই ইউনিয়নে কোন গাছ কিনলে সেই গাছ কাটতে বাঁধা দেওয়া হয়। বর্তমান ওই গ্রামে প্রায় ১২ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই লাইনের আওতায় প্রায় ৭ শ’ গ্রাহকের বাড়ি ঘরে আনিস বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে বিদ্যুতের ওয়্যারিং করিয়ে বাড়ি প্রতি ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করছেন। আনিস বাহিনীর ভয়ে গ্রাহকরা টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তার অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে শতশত কৃষকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রভাবশালী মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সেলিমুজ্জামান আসাদ সোতলা বিলে মাছের ঘের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়। এছাড়া ওই চেয়ারম্যান এলাকার সম্মানী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে নোটিশ করে ডেকে অপমান অপদস্ত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরণডালি গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসি এক ব্যক্তি বাড়ি আসলে চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তাকে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হতে নোটিশ করেন। তিনি পরিষদে না যাওয়ায় ১ জানুয়ারি চেয়ারম্যান তার বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অবশেষে জানতে পেরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেদিন ওই প্রবাসি ব্যক্তি রেহাই পান। তার দ্বারা আওয়ামীলীগের লোকজনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। এমন বহু ঘটনা রয়েছে ওই এলাকায় যা মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
কেশবপুর থানার ওসি (তদন্ত) শেখ মাসুদুর রহমান বলেন, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ মলি¬ক বাদি হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের একটি এবং যশোর ডিবি পুলিশ মাদক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেছেন। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ