মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক

খুলনা অফিস: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি গত ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে, এই দীর্ঘ সময় আমাদের ওপর নানা নির্যাতন-নীপিড়ন চালানো হয়েছে। তরপরও দেশবাসীর মন থেকে জাতীয় পার্টিকে মুছে ফেলা যায়নি। সেদিন যারা জাতীয় পার্টিকে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত করেছিল আজ তাদের অবস্থান কোথায়? প্রেসলিস্ট আর বিবৃতিনির্ভর দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। অথচ জাতীয় পার্টি আজ সারাদেশে সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করছে। যে কারণে মানুষ পরিবর্তনের আশায় দুই দলের ব্যর্থ শাসন থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় খুলনার সার্কিট হাউস সেমিনার কক্ষে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী এস, এম মুশফিকুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণার উদ্বোধন এবং আইনজীবীদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জাতীয় পার্টির শাসনামলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সিটি কর্পোরেশন, পাবলিক হলসহ অসংখ্য উন্নয়ন আমরা করেছি। আমি আজ সেই সিটি কর্পোরেশনে আমার দলের প্রার্থী হিসেবে মুশফিকুর রহমানকে খুলনাবাসীর মাঝে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আশা করছি আগামী নির্বাচনে খুলনার মানুষ জাতীয় পার্টিকে মেয়র উপহার দেবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহানগর জাপা নেতা সৈয়দ খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য সচীব যুবনেতা তৈমুর হোসেন শাহিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির মহাসচীব এ বি এম রুহুলামিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জাপা চেয়ারম্যানের তথ্য উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচীব ও খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, চেয়ারম্যানের সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা সোমনাথ দে, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোল্যা মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাখন সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সদস্য এম হাদিউজ্জামান,¡ মোশারেফ হোসেন, মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, সাজেন্ট অব. শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ইসমাইল খান টিপু, ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম, মোস্তফা শফিকুল ইসলাম, শরীফ মোহাম্মাদ শাহাজান, শেখ সাদী, খলিলুর রহমান, গাজী গওহর, মোতয়ালী শেখ প্রমুখ।
এর আগে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট হাফিজুর রহমান শান্ত, এডভোকেট মো. মাসুম বিল্লাহ, এডভোকেট এস এম মারুফ আহম্মেদ, এডভোকেট মো. আবু ওবায়দা (বিপু), এডভোকেট কাজল শেখ, এডভোকেট এমদাদুল হক, এডভোকেট সৈয়দ তৌফিক উল্লাহের নেতৃত্বে ১৯ জন আইনজীবী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। পরে মেয়র প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের কেক কেটে প্রচারণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অপরদিকে একই স্থানে বেলা আড়াইটায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোল্লা শওকত হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে চার শতাধিক, মহানগরের ১৬, ২২, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১ নং ওয়ার্ডের কামাল আহম্মেদ, বাবুল আক্তার, মো. সোহেল, মীর মোহাম্মদ আলী মানিক, খন্দকার সালাম, শেখ জাহাঙ্গীর, কাজী নাহিদ হাসান ও কয়রা উপজেলা তরুণ দলের সভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিভিন্ন দলের শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আসার আগেই খুলনায় জাতীয় পার্টিতে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলত্যাগের হিড়িক : খুলনায় জাতীয় পার্টিতে বহুলালোচিত এক দরবেশ যোগ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছাড়লেন মহানগর সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. গাউসুল আজমসহ মহানগরীর পাঁচ থানার অধিকাংশ ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অপরদিকে পদত্যাগকারীদের একটি অংশ আবার যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। আর যারা যোগ দেননি তারা বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, খুলনাতে এমনিতে জাপার অবস্থান নড়বড়ে। নানা কারণে হতাশ নেতাকর্মীরা অনেকটাই সংগঠন বিমুখ। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি জাপায় যোগ দেন এস এম মুশফিকুর রহমান ওরফে দরবেশ। তিনি ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত তৎকালীন মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামী। শুধু যোগদানের মধ্যে মুশফিকের তৎপরতা সীমাবদ্ধ নেই। জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তাকে আগামী খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। চেয়ারম্যানের ওই ঘোষণাই মহানগর জাপা সভাপতি শেখ আবুল হোসেনসহ একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়। চেয়ারম্যানের ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হন তারা। অবশেষে সোমবার রাতে মহানগর সভাপতি শেখ আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. গাউসুল আজমসহ ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের একটি অংশ জাপা থেকে পদত্যাগ করেন।
কাশেম হত্যা মামলার আসামী জাতীয় পার্টিতে এটা মানতে না পেরেই ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পাতানো নাতির ইনগেজমেন্টে এরশাদের কোটি টাকার উপহার : আলোচিত সমালোচিত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হঠাৎ করে খুলনায় ঝটিকা সফর নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন। দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজের প্রোগ্রাম তড়িঘড়ি করে শেষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যান নিরালা আবাসিক এলাকার ৮ নং রোডের ২ নং বাড়ি ‘জাহান ম্যানসনে’। এই বাড়িটির মালিক ইলিয়াস মোল্লা। তার ছেলে মেজর উবাইদুল সৌরভের সঙ্গে এরশাদের পাতানো নাতনী তামান্নার ইনগেজমেন্ট হয়। তিনি তাদের উপহার দেন হীরার আংটি, হীরার চেইন, সোনার বোতাম ও র‌্যাডো ঘড়ি।
ছেলের পারিবারিক সূত্র জানান, রংপুরের রূপবতী তামান্নার নামে এরশাদ ঢাকায় দিয়েছে ফ্লাট ও দু’টি বিলাসবহুল গাড়ি। পরিবারের কেউ কেউ বলেন ‘তামান্না’ এরশাদের পাতানো কন্যা আবার কেউ কেউ বলেন, পাতানো নাতনী। তবে সুন্দরী তামান্নার কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে উঠার একটি বড় অংশ কেটেছে ঢাকার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে। এ ঘটনাটি গতকাল খুলনায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সকলের মুখে মুখে ছিল বিষয়টি।
বিদিশাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন : জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে নিয়ে গতকাল সারাদিনই নগরীতে গুঞ্জন ছিল। সেই গুঞ্জন ডালাপালা বিস্তার করে। নানা জন নানান কথা বলতে থাকে। নগরীর চায়ের দোকান আড্ডাস্থল ছিল এরশাদ ও বিদিশাকে নিয়ে নানান কথা। মিডিয়াকর্মীরা বিদিশার সন্ধানে নগরীর মুন্সিপাড়াস্থ তার চাচার বাড়িতে খোঁজ নেন। তবে সেখানেও গিয়ে বিদিশার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা বাগেরহাটের মেয়ে। তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ওই দম্পতির একটি ছেলেও আছে। আর বিদিশার সঙ্গে পূর্বপরিচিত ছিল সদ্য জাপায় যোগদানকারী মুশফিক। সেই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে নতুন কোনো যোগাযোগ হচ্ছে কিনা সেই গুঞ্জনই ছিল নগরীতে। তবে এ ব্যাপারে জাপার দায়িত্বশীল কোনো সূত্র নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। এরশাদ ও বিদিশার বিষয়ে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, কোনোভাবেই তাদের মধ্যে যোগাযোগের সম্ভাবনা কম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ