শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মন্দির ও বাড়ি ঘরে কালো পতাকা উড়ছে

বগুড়া অফিস : মন্দিরের পুরোহিতসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা এবং মন্দিরে প্রবেশ করে নারী ও শিশুদেরকে মারপিটের প্রতিবাদে বগুড়া শহরের চেলেপাড়ায় কৃঞ্চপাড়া লালবাগান সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ে বাড়ি ঘরে কালো পতাকা উড়ছে। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে কৃঞ্চপাড়া লালবাগান সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নিত্য ভোগ চলাকালে কাশি ও ঘন্টার শব্দে বিরক্ত হয়ে একজন কারা রক্ষি তার লোকজন নিয়ে মন্দিরে হামলা করে বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, শহরের চেলোপাড়ায় (কৃঞ্চ পাড়া) বগুড়া জেলা কারাগারের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্থায়ী মন্দির স্থাপন করে দুর্গাপুজা ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। মন্দিরের আশেপাশের বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, গত ১৬ মার্চ দুপুরে মন্দিরে নিত্য ভোগ অনুষ্ঠান চলছিল। এসময় মন্দিরে ঘন্টা ও কাশির বাজানোর শব্দে বিরক্ত হয়ে মন্দিরের পার্শ্বে বসবাসরত কারারক্ষি আব্দুর রউফ ও তার স্ত্রী পারভীন মন্দিরে গিয়ে ঘন্টা বাজানো বন্ধ করতে বলে। এনিয়ে বাকবিতন্ডা এক পর্যায়ে তারা লোকজন নিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে লোকজনকে মারপিট করে। এতে মন্দির পরিচর্যা কারী উর্মিলা দাস (৫৫), সাজন কুমার (১৬) এবং অজিত কুমার (১৩) নামের তিনজন আহত হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা কারাগারের দাবি করা ওই সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদের জন্য ২০০৯ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের আদালতে উচ্ছেদ মামলা করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। ১৩ মার্চ সকাল ১০ টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করতে যান। এসময় কয়েকজন কারারক্ষি তদন্তকাজে সহযোগিতা করেন। তদন্ত কাজ শেষে কমিটির লোকজন ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর পরই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কারারক্ষি আব্দুর রউফ এর উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। শুধু তাই নয় তারা আব্দুর রউফের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় বগুড়া জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মুহাম্মদ আবু সাদ্দাত মন্দিরের পুরোহিত মঙ্গল ঠাকুরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭জন নারী পুরুষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর ১৬ মার্চ মন্দিরে ঢুকে পুজারীদের মারপিট করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এঘটনার প্রতিবাদের ১৭ মার্চ থেকে কৃঞ্চপাড়া লালবাগান সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এবং আশেপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে কালো পতাকা উড়ানো হচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়েরর লোকজন জানান, সরকারি এই জায়গায় অনেক বছর থেকে অস্থায়ী মন্দির করে পুজা অর্চনা করা হচ্ছে। এই জায়গা নিয়ে মামলা ও চলছে। মামলার রায় না হতেই মন্দির উচ্ছেদের জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মন্দিরে গো-মাংশ নিক্ষেপ করা হয়। এর আগে মন্দিরে রক্ত ঢেলে দিয়ে অপবিত্র করা হয়। শুধু তাই নয় কারাগারের লোকজন নানা ভাবে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে। একারনে এলাকায় সম্প্রীতি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসব কারনে কিছুৃদিন আগে কারাগারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তগন জায়গা পরিদর্শন করেছেন। কৃঞ্চপাড়া লালবাগান সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি জয়ন্ত সরকার জানান, কারাগার কর্তৃপক্ষ আদালত থেকে রায় পেলে নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদ হবে। কিন্তু তার আগেই কারাগারের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র করছে। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মন্দিরে প্রবেশ করে মারপিট করার প্রতিবাদে কাালো পতাকা উড়ানো হচ্ছে। মারপিটে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষের দায়ের করার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তবে মন্দিরে এবং হিন্দুদের বাড়িতে কালো পতাকা উড়ানো হচ্ছে এবিষয়টি তার জানা নেই। বগুড়্ াজেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মুহাম্মদ আবু সাদ্দাত এর সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ