শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ওয়ানডেতে প্রত্যাশার পারদ চড়েছে আরও উপরে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : শততম টেস্ট জয়ের রেশ এখনও আছে। এরই মধ্যে ওয়ানডে সিরিজের দামামাও বেজে গেছে। টেস্ট শেষের আগের দিন কলম্বোয় পৌঁছে গেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ দলের আরও তিন ক্রিকেটার। চলছে অনুশীলন। বাড়ছে প্রত্যাশা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে আগামী শনিবার। তার আগে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। টেস্টেই যদি ভালো করা সম্ভব হয়, ওয়ানডেতে প্রত্যাশা আরও ভালো কিছুর! এমনিতেই টেস্টেও চেয়ে ওয়ানডের বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশা বেশি থাকে সবসময়। এবার সেটি বেড়েছে আরও। নিজেদের শততম টেস্টে ভালো পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের প্রিয় সংস্করণে প্রত্যাশার পারদ চড়েছে আরও ওপরে। সেটি টের পাচ্ছেন দলপতি মাশরাফিও। ওয়ানডে অধিনায়ক চান প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে। বলেছেন, টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতে অবশ্যই প্রত্যাশা বেশি। আমাদের মতো সমর্থকদেরও তাই। লাল বল থেকে সাদা বলে আসা, সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার ব্যাপার। প্রত্যাশা তো অবশ্যই আছে। তার জন্য ভালো খেলতে হবে। টেস্টেও আমরা শুরু থেকে ভালো খেলেছি, ফলাফল ভালো হয়েছে।’ প্রত্যাশা বেড়ে গেলেও এটিকে চাপ মনে করছেন না মাশরাফি। বরং তার আশা, টেস্টের আত্মবিশ্বাস ওয়ানডেতেও বয়ে আনবে দল। অধিনায়কের ভাবনা শুধু ব্যাটিংয়ে মানিয়ে নেওয়া নিয়ে। ‘যদি ওয়ানডে স্কোয়াড দেখেন, বেশির ভাগ টেস্ট স্কোয়াডের খেলোয়াড়। তারা তাই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে। কারণ বড় ফরম্যাটে বড় একটা ম্যাচ জিতেছে। তারপরও আমার মনে হয় ব্যাটিংটা একটু চিন্তা থাকতে পারে। কারণ ওদের কয়েকজন ভালো বোলার আছে। আর আমরা টানা পাঁচটা টেস্ট খেলার পর সাদা বলে খেলব। এখন যেটা হবে, আমাদের রান বের করতে হবে। ওদের কিছু ‘ক্রিটিক্যাল’ বোলার আছে, তাদের কাছ থেকে রান বের করাটা কঠিন হবে। মানসিকভাবে নির্ভার থাকলে, শুরুটা ভালো করতে পারলে সব ভালো হবে।’
কলম্বোয় জেতার পরই টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জানিয়ে দিলেন, এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য ওয়ানডে সিরিজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিততে চান তারা। সেই সামর্থ্য আছেও মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। টেস্টে শ্রীলঙ্কা যতটা ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ, ওয়ানডেতে ততটা নয়। ৩৮ ম্যাচে চারটি জয় আছে বাংলাদেশের। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৩৩টি ম্যাচ, অন্যটি পরিত্যক্ত। বাংলাদেশের চার জয়ের তিনটি দেশের মাটিতে। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে পাল্লেকেলেতে প্রথমবারের মতো জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম দ্বীপ দেশটির বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছিল তারা। সেই সফরে প্রথম ম্যাচে ঝকঝকে এক শতক করেন তামিম ইকবাল। সেই ম্যাচে জেতেনি বাংলাদেশ।
চোটের জন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান খেলেননি শেষ দুই ওয়ানডে। বৃষ্টিতে ভেসে যায় দ্বিতীয় ওয়ানডে, ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে শেষ ম্যাচ ৩ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো হারানো পর মুশফিক জানান, এই আত্মবিশ্বাস ওয়ানডেতেও নিয়ে যেতে চান তারা। শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলা ১৬ ওয়ানডের ১৪টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। একটি পরিত্যক্ত, জিতেছে অন্যটিতে। সেই ম্যাচই কি এবার অনুপ্রেরণা। অনুশীলন শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা মাশরাফি অবশ্য অতীত থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতেই রাজি নন।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পেছনে কী হয়েছে, সেটা থেকে কোনো সাহায্য পাই না। তবে কোনো খেলোয়াড় এসব থেকে অনুপ্রাণিত হলে অন্য কথা। আমার ক্ষেত্রে অতীত থেকে কোনো কিছু হয় না। আমি আগে অনেক-অনেক ম্যাচ হেরে এসেছি। এর মানে এটা নয় যে, আমি জিততে পারবো না। আমার মনে হয় না ওইটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু আছে।’ অস্ত্রোপচারের জন্য ২০১৩ সালের সেই সফরে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। ১-১ ব্যবধান টেস্ট সিরিজ ড্রয়ে এবার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারেরই। ওয়ানডেতেও দল তার ওপর একইরকম নির্ভরশীল। বিপিএল’র ফাইনালে পাওয়া চোটের জন্য খেলা হয়নি মাশরাফিরও। নিউ জিল্যান্ডে পাওয়া চোট থেকে সেরে উঠে খেলতে এসেছেন। ছন্দে আছেন সাকিব-তামিমও। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতার এটাই সুযোগ। চোটের জন্য শ্রীলঙ্কা দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। দলটি নিজেদের শেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে এসেছে ৫-০ ব্যবধানে। বাংলাদেশ সিরিজে দলে এসেছে অনেক পরিবর্তন। হারের মধ্যে থাকা দলটিকে আরও চেপে ধরতে উন্মুখ হয়ে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা শেষ টেস্টে হারের বেদনায় নীল হয়ে আছে। এটা জানাই যে, ওরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সে যতই ওদের দলটা অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকুক না কেন। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার কয়েকজন নতুন বোলারকে সমীহই করছেন মাশরাফি। যেমন বাঁহাতি চায়নাম্যান বোলার লক্ষ্মণ সান্দাকান, তরুণ ফাস্ট বোলার লাহিরু কুমারা, সঞ্জয় ভিকুম। এ ক্ষেত্রে দলের ব্যাটিংটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অধিনায়ক, ‘যদি একটা জিনিসের কথা বলেন, আমাদের ব্যাটিংটা ভালো হতে হবে। তবে নির্ভার থেকে ব্যাট করলে মনে হয় সমস্যা হবে না।’ সমস্যা নেই মাশরাফির চোট পাওয়া আঙুলেও, ‘আঙুলে কোনো সমস্যা নেই। বোলিংটা যেহেতু পুরো শরীরের ব্যাপার, একটু অনভ্যস্ত লাগছে। তবে ঠিক হয়ে যাবে।’
মাশরাফি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও সম্ভাবনা দেখছেন দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই টেস্ট দলের বলে, ‘আমার দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তো টেস্ট খেলে ফিরছে। একটা বড় ফরম্যাটে খেলে মানসিকভাবে তৈরি হয়ে আসছে। এটা অবশ্যই ভালো।’ মাশরাফি বড় অনুপ্রেরণাদায়ী দলনেতা। এমন একজনের কাছে দাবি যে, গোটা দলই যেন চাঙা হয়ে মাঠে নামে। মাশরাফি যখন এ কথা বলছিলেন, পাশেই নেটে বোলিংটা শেষ করলেন মাহমুদউল্লাহ। স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদউল্লাহ প্রসঙ্গ উঠল। তার টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া, শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে কত কিছু ঘটল। মাশরাফি বললেন, ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়টিকে অনুপ্রাণিত করার কাজটি তিনি যথারীতি করে চলেছেন। ব্যাট হাতে শেষের দিকে নেমে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস। নতুন বলে বিরেন্দর শেবাগের স্টাম্প উপড়ে দেওয়া। পুরোনো বলে শিকার মহেন্দ্র সিং ধোনি। মাঠে প্রাণবন্ত উপস্থিতি। বাংলাদেশের শততম ওয়ানডেতে জয়ের নায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দল যখন খেলছে শততম টেস্ট, মাশরাফির সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের তখন অনেক দিনের বিচ্ছেদ। তবু হয়ে রইলেন তিনি দারুণ এই জয়ের সাক্ষী! ওয়ানডে সিরিজে খেলতে আগের দিনই শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন মাশরাফিসহ ওয়ানডে দলে থাকা চার জন। শেষ দিনে গ্যালারিতে বসে দেখেছেন খেলা। জয়ের পর গিয়েছিলেন ড্রেসিং রুমেও। টেস্ট দলের অংশ না হলেও দেখেছেন কাছ থেকে। ছিলেন উদযাপনের অংশ।
এতেই সৌভাগ্যবান মানছেন নিজেকে। সোমবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে এসে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক শোনালেন দলের টেস্ট জয়ের অনুভূতি। বাংলাদেশ শততম ওয়ানডে খেলেছিল ২০০৪ সালে। সেই ম্যাচে হারিয়েছিল ভারতকে, দেশের মাটিতে যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়। মাশরাফি হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০০৯ সালে। চোটের কারণে তার পর থমকে গেছে টেস্ট ক্যারিয়ার। এবারও তিনি নিজেদের পারফরমেন্সের পাশাপাশি দলকেও উজ্জীবিত করে তুলবেন এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ