‘আর ফিরতে চাই না আতিয়া মহলে’
অনলাইন ডেস্ক: "জঙ্গি-বিরোধী এই অভিযান এক সময় শেষ হবে, বাড়িটা থেকে জঙ্গি ও বিস্ফোরকও খালি করা হবে। সবই হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।"
"কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ঐ বাড়িতে আটকে থাকার সময়ে এত দু:সহ স্মৃতি ও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে, যে সেখানে আর বসবাস করা সম্ভব না।"
বলছিলেন আতিয়া ভবনের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও শিরিন আক্তার দম্পতি।
গোলগুলির শব্দে তারা ধরে নিয়েছিলেন, এই ভবন থেকে আর জীবিত বের হতে পারবেন না তারা।
মৃতদেহের পরিচয় যেন নিশ্চিত হতে পারে সবাই, সেজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে নিয়েছিলেন পুরোটা সময়।
কিন্তু শিরিন সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান, যখন তার স্কুল পড়ুয়া শিশুকন্যা জানতে চায়, "মা আমার তো পরিচয়পত্র নাই, আমার কি হবে? আমাকে কি মেরে ফেলবে?"
শিরিন জানিয়েছেন, নতুন ভাড়টিয়াদের তেমন একটা চিনতেন না তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন মাইকে মর্জিনা বেগমকে বের হয়ে আসতে বলছিল, তারা বুঝতে পারছিলেন না কাকে ডাকা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:কমান্ডো অভিযানের তৃতীয় সকালে গুলির শব্দ
‘বিবাহ-বিচ্ছেদ হলে টাকা ফেরত’ দেবে হোটেল
বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ জঙ্গিরা কিভাবে পায়?
শিরিন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও আর কখনো আতিয়া মহলে ফিরতে চাননা তিনি বা তার পরিবার।
প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুর শঙ্কায় ৩০ঘন্টা কাটিয়ে আসার পর ঐ বাড়িতে আর দৈনন্দিন জীবন যাপন করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন শিরিন।
একই বক্তব্য ঐ বাড়ির আরেক বাসিন্দা পঞ্চম তলার বাসিন্দা আনিসুর রহমানের।
আটকে থাকার পুরো সময়টাতে ফ্ল্যাটের মেঝেতে লেপ আর তোষক ফেলে শুয়েছিলেন মি. রহমান ও তার স্ত্রী।
ভেবেছিলেন, অভিযানে জঙ্গিদের সাথে তারাও মারা পড়বেন।
"শুক্রবার রাতে প্রতি মূহুর্তের গোলাগুলির শব্দে ভেবেছি মৃত্যু আমার দরজায় কড়া নাড়ছে"।
মৃত্যু আসন্ন জেনে প্রায় সব আত্মীয়কে ফোন করে কথা বলে নিয়েছিলেন।
শনিবার সকাল ১০-১১টার দিকে, যখন তার দরজায় টোকা পড়ে, উঁকি দিয়ে দেখলেন দরজায় সেনাসদস্যরা।
ইশারায় চুপ থাকতে বলে একে তাদের বের করে নিয়ে আসে সেনা সদস্যরা।
বের হবার পরও আতংক কাটেনি মি. রহমানের। স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেছেন সিলেট শহরে।
আর কখনো ফিরতে চান না আতিয়া মহলে। সব স্বাভাবিক হয়ে গেলেও না।-বিবিসি বাংলা