মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সিরিজে সমতা

রফিকুল ইসলাম মিঞা : শ্রীলংকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় করা হলো না বাংলাদেশের। সিরিজ জয়ের শতভাগ ইচ্ছা থাকার পরও শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে সিরিজটিও ড্র হলো ১-১ ব্যবধানে। এর আগে টেস্ট সিরিজও ড্র হয়েছিল সম ব্যবধানেই। শ্রীলংকার মাটিতে শততম টেস্ট জিতে ফর্মের তুঙ্গে থেকেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। আর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে স্বাগতিকদের ৯০ রানে হারিয়ে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকয় সিরিজ জয়টা বাংলাদেশের জন্য সহজই মনে হয়েছিল সবার কাছে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকা ৩১১ রান করে বাংলাদেশকে একটা কঠিন বার্তা দিয়েছিল। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে শেষ ম্যাচটি দু-দলের জন্যই আশার প্রতীক হিসেবে ছিল। তবে শেষ ভালোটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। কারণ গতকাল শেষ ম্যাচটিতে শ্রীলংকা ৭০ রানে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ ড্র করেছে ১-১ ব্যবধানে। ফলে টেস্টে পওে ওয়ানডে সিরিজও ড্র হলো।

গতকাল টস জিতে আগে শ্রীলংকাকে ব্যাট করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে শ্রীলংকা ৯ উইকেটে করে ২৮০ রান। ফলে জয়ের জন্য ২৮১ রানের টার্গেটটা মোটেও সহজ ছিলনা বাংলাদেশের জন্য। তারপরও প্রথম ম্যাচে ৩২৪ রান করা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে এতো খারাপ ব্যাটিং করবে তা কেউ ভাবেনি। কারণ ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতাই দলকে বিপদে ফেলে দেয়। শেষ পর্যন্তু ৪৪.৩ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ২১০ রান করলে শ্রীলংকা জয় পায় ৭০ রানে। ফলে ব্যাটিসম্যানদের ব্যর্থতায় শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুযোগটা হাতছাড়ায় হয় মাশরাফিদের। জয়ের জন্য ২৮১ রানের কঠিন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাই ভালো হয়নি। কারণ দ্রুত তামিমের বিদায়টা দলের মনোবলে দারুণ ভাবে আঘাত হানে। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে শুভ সূচনা করেন তামিম। কিন্তু ওভারের শেষ বলে নুয়ান কুলাসেকারাকে ফিরতি ক্যাচ তুলে দেন তামিম। ফলে দলীয় ৪ রানেই বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট। আউট হওয়ার আগে ৬ বলে তামিম করেন ৪ রান। নুয়ান কুলাসেকারা তার দ্বিতীয় ওভারে সাব্বির রহমানকেও সাজঘরে পাঠান দলীয় ১০ রানে। ৩ বলে রানের খাতা না খুলে দিনেশ চান্ডিমালের হাতে ধরা পড়েন সাব্বির। আর পরের ওভারে সুরাঙ্গা লাকমলের বলে এলডি আউট হন মুশফিকুর রহিম। দলীয় ১১ রানে আউট হওয়া মুশফিকও রানের খাতা খুলতে পারেননি। দলীয় ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রথমেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে বাংলাদেশ। তবে সৌম্য ও সাকিবের ব্যাটে প্রতিরোধে কিছুট ঘুওের দাড়ায় মাশরাফিরা। তবে ৭৭ রানের এ জুটি ভাংগার আগেই তারা দলকে পৌছে দেয় ৮৮ রানে। সৌম্যর বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। দিলরুয়ান পেরেরার বলে স্টাম্পিং হন সৌম্য। ৪৪ বলে ৩৮ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। এর পর মোসাদ্দেকের সাথে জুটি করেন সাকিব। দলীয় ১১১ রানে সেক্কুজে প্রসন্নের কাছে বোল্ড হন মোসাদ্দেক। আউট হওয়ার আগে ২০ বলে ৯ রান করে তিনি। দলীয় ১১৮ রানে বাংলাদেশ হারায় সাকিবের উইকেট। আউট হওয়ার আগে সাকিব দলের পক্ষে করেন সর্বোচ্চ ৫৪ রান। এর আগে ৫৫ বলে ৭ চারে ৩৪তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন সাকিব। হাফসেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের স্কোর কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন সাকিব। দিলরুয়ান পেরেরার বলে শর্ট কাভারে সাকিব ধরা পড়েন গুনাথিলাকার হাতে। গতকাল দলের প্রয়োজনে নিজেকে প্রমান করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৭ রান করেই লাকমলের বলে আউট হয়ে মাঠ চাড়েন তিনি। ফলে ১২৭ রানে প্রথম ৭ উইকেট হারিয়ে জয় থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও বাংলাদেশকে টেনে তুলার চেস্টা করেছেন মেহেদি হাসন মেরাজ। শক্ত হাতে ব্যাট চালিয়ে দলের পরাজয় এড়াতে না পারলেও পরাজয়ের ব্যবধানটা ভালোই কমিয়েছেন। মেরাজের ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত দুশত রানের স্কোর পেরিয়ে ২১০ রান করতে পেরেছে। না হলে আরও আগে শেষ হয়ে যেতে পারত বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ দিকে নেমে এই অলরাউন্ডার খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। এছাড়া মাশরাফি ১৬ আর তাসকিন ১৪ রান করেন। গতকাল বাংলাদেশ খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওখার। ৪৪.৩ বলেই ২১০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শ্রীলংকার পক্ষে কুলাসেকারা একাই নেন ৪ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন দিলরুয়ান পেরেরা ও লাকমল। 

এর আগে টসে হেরে শ্রীলংকা প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে করে ২৮০ রান। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাট করে স্বাগতিকরা। গুনাথিলাকা-থারাঙ্গা ওপেনিং জুটিতেই রঙ্কানরা কর্রে ৭৬ রান। অবশেষে এই জুটি ভেঙ্গে দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে গুনাথিলাকাকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তিনি। দলীয় ৮৭ রানে শ্রীলংকা হারায় দ্বিতীয় উইকেট। অপর ওপেনার উপল থারাঙ্গাকে বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফিরান তাসকিন আহমেদ। আউট হওয়ার আগে থারাঙ্গা ৩৫ বলে ৫টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৩৫ রান করেন। এরপর মেন্ডিস ও চান্দিমালের জুটি করে দলকে এগিয়ে নেয়। এই জুটি ভাংগার আগেই দলটি পৌছে যায় ১৩৬ রানে। দলীয় ১৩৬ রানে চান্দিমালকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন তাসকিন ও মুশফিক। ২টি চারের মারে ২১ রান করেন চান্দিমাল। এ জুটি করেছে ৪৯ রানের পার্টনাশীপ। এরপর ১২ রানে মিলিন্দা সিরিবর্দানাকেও রান আউটের শিকার করে টাইগাররা। তবে অপর প্রান্তে শক্ত হাতে ব্যাট চালিয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশাল মেন্ডিস। দলীয় ১৯৪ রানে তাকে বিদায় করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আউট হওয়ার আগে মেন্ডিস ৪টি চারের মারে ৫৪ রান করেন। নিজের সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে আসেলা গুনারতœতে আউট করে মাশরাফি নেন নিজের প্রথম উইকেট। আউট হওয়ার আগে গুনারতেœর সংগ্রহ ৩টি চারের মারে ৩৪ রান। দলীয় ২৩০ রানে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়েছেন সিকুজি প্রসন্ন। ১ রান করেই সাজঘরে ফিরেন তিনি। শেষ দিকে থিসেরা পেরেরার দ্রুত হাফ সেঞ্চুরিতে ২৮০ রানের চ্যালেজ্ঞিং স্কোর গড়তে পারে শ্রীলংকা। পেরেরা ৪০ বলে ৫২ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি ৩টি ও মোস্তাফিজ ২টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ ও তাসকিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলংকা : ৫০ ওভারে ২৮০/৯ (গুনাথিলাকা ৩৪, থারাঙ্গা ৩৫, মেন্ডিস ৫৪, চান্দিমাল ২১, সিরিবর্ধনা ১২, গুনারতেœ ৩৪, থিসারা ৫২, প্রসন্ন ১, দিলরুয়ান ১৫, কুলাসেকারা ১*, লাকমল ২*; মাশরাফি ৩/৬৫, মোস্তাাফিজ ২/৫৫, মিরাজ ১/৪৯, তাসকিন ১/৫০, মাহমুদউল্লাহ ০/৫, সাকিব ০/৪১, মোসাদ্দেক ০/১৩)

বাংলাদেশ : ৪৪.৩ ওভারে ২১০ (তামিম ৪, সৌম্য ৩৮, সাব্বির ০, মুশফিক ০, সাকিব ৫৪, মোসাদ্দেক ৯, মাহমুদউল্লাহ ৭, মিরাজ ৫১, মাশরাফি ১৬, তাসকিন ১৪, মুস্তাফিজ ১*; কুলাসেকারা ৪/৩৭, লাকমল ২/৩৮, দিলরুয়ান ২/৪৭, থিসারা ০/১৪, গুনারতেœ ০/১৬, প্রসন্ন ২/৩৩, সিরিবর্ধনা ০/২৩)

ফল: শ্রীলংকা ৭০ রানে জয়ী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ