শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্বে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ এমপির বয়স ৩০-এর নিচে

সংসদ রিপোর্টার : বিশ্বের ১২৮টি দেশের ৪৫ হাজার পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে ৩০ বছরের নিচে বয়স এমন এমপির সংখ্যা মাত্র ১ দশমিক ৯ ভাগ। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তরুণ এমপির প্রতিনিধিত্ব কম। সবচেয়ে বেশি সুইডেনে। প্রায় ৩৩ শতাংশ নিম্নকক্ষ এবং ৮০ শতাংশ উচ্চকক্ষে ৩০ বছরের কম বয়স এমন এমপি একজনও নেই।
ইয়ুথ পার্টিসিপেশন ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্ট-২০১৬ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আইপিইউর (ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) ১৩৬তম সম্মেলনে ফোরাম ফর ইয়ুথ পার্লামেন্টারিয়ানের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন আইপিইউ জেন্ডার পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের প্রতিনিধি জেরিনা হেলাল।
বিশ্বের ১২৮টি দেশের সংসদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ২০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৭ ভাগ রাজনীতিবিমুখতার কারণে যাদের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়ুথ পার্লামেন্টারিয়ানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উগান্ডার এমপি মাওরিন অশ্রু রাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহ না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যুবকদের মতে, রাজনীতি নোংরা। রাজনীতিবিদেরা মিথ্যা কথা বলেন। আকাশকুসুম প্রতিশ্রুতি দেন, যা বাস্তবায়নের অযোগ্য। যে কারণে তারা রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছেন। অথচ রাজনীতিতে তরুণ সমাজের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা সচেতন, উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে রয়েছেন।
ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তরুণদের বেশির ভাগই উত্তরাধিকারের রাজনীতি থেকে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই রাজনীতিকের সন্তান বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন। রাজনীতি খুবই আকর্ষণীয়, তবে যুবসমাজ এতে আকর্ষণ বোধ করছে না। রাজনীতিতে যুবসমাজের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইপিইউ ফোরামের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমরা কাজ করতে চাই।’
রাজনীতিতে তরুণদের কম অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাওরিন বলেন, তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে অর্থ, ভোটারদের সাড়া পাওয়া, রাজনীতির মনোনয়ন নিশ্চিত করাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এর মধ্যে।
নির্বাচনের সুযোগ বিষয়ে নিজের দেশের বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি তুলে ধরে মাওরিন জানান, ১৮ বছর বয়সে সবাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এ সময় তাঁকে সাজার আওতায় এনে প্রয়োজনে জেলেও পাঠানো হয়। কিন্তু এই বয়সে তারা নির্বাচন করতে পারেন না।
জেরিনা হেলালের প্রতিবেদনে সংসদ সদস্য পদে তরুণদের প্রতিনিধিত্বের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়। বিশ্বে ৩০ বছর বা এর কম বয়স এমন এমপির সংখ্যা মাত্র ১ দশমিক ৯ ভাগ। ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বয়স এমন এমপির সংখ্যা ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২৬ শতাংশ এমপি রয়েছেন। তবে তরুণ এমপিদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি, এই অনুপাত ৬০: ৪০।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তরুণ এমপির প্রতিনিধিত্ব সুইডেনে। দেশটিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এমপির বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। ইকুয়েডর রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে, ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এমপি নিয়ে ফিনল্যান্ড তৃতীয় স্থানে। এরপরে নরওয়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
৪০ বছরের নিচে বয়স ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ এমপি রয়েছে ডেনমার্কে। অ্যান্ডোরাতে এ হার ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ইকুয়েডর ৩৮ শতাংশ এমপির বয়স ৪৫ বছরের নিচে। এ হার ওমানে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ইথিওপিয়াতে ৬৩ দশমিক ৬ এবং অ্যান্ডোরা ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুসারে আমেরিকা-ইউরোপ-আফ্রিকান দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম বয়সী সর্বাধিক সংসদ সদস্য রয়েছে। এ হিসেবে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তরুণ প্রতিনিধিত্ব কম। সাম্প্রতিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত নয়টি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, এই নির্বাচনে ৪৫ বছরের নিচের বয়সী ৫০ শতাংশ সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ