শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

জঙ্গিদের সঙ্গে শাসকদলের সম্পৃক্ততা জাতিকে হতবাক করেছে - বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে শাসকদলের সংশ্লিষ্টতা জাতিকে হতবাক করেছে। গত কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহে যেসব জঙ্গিদের ধরা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ধোবাউড়া উপজেলা বাঘবেড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন। আরও দুজন আওয়ামী পরিবারের সদস্য এবং যেই ভবন থেকে তাদেরকে ধরা হয়েছে সেই ভবনটিও আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির বাড়ি। যেমনভাবে শায়খ আব্দুর রহমান থেকে শুরু করে হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তিনি ভারতের সাথে চুক্তি সর্ম্পকে বলেন, দিল্লি নিতে জানে কিন্তু দিতে জানে না। আজকের মতোই জনমতকে তাচ্ছিল্য করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অঙ্গচ্ছেদ করে বেরুবাড়ী দিল্লির দরবারে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা ভূমি সীমান্ত সমস্যার এক ধরনের লোক দেখানো সমাধানের কথা বলা হলেও এখনও কঠিন জটিল আবর্তের মধ্যে পড়ে আছে ছিটমহলবাসীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সুইডিশ রেডিওতে প্রচারিত সংবাদের জের ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের গুপ্তহত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা ফাঁস হয়ে যাওয়াতে এদের কর্মকা-ের বিভৎস রুপ এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের মানুষের বিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা কিভাবে কোন ব্যক্তিকে গুম করা হয় সেটির তিনটি কৌশলের কথাও উল্লেখ করেছেন। কৌশলগুলি হলো-টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ধরা, তাকে হত্যা করা, লাশ লুকিয়ে ফেলা। নিহতদের মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে লাশের সঙ্গে কিভাবে কংক্রিটের ব্লক বেঁধে দেওয়া হয় অডিও কথোপকথনে সেটিরও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘কার সন্তান কখন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় এ নিয়ে এখন সারাদেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার ওপর সারাদেশ এখন সুইডিশ রেডিওতে অডিওর ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর  এখন শোক ও বেদনায় স্তব্ধ। র‌্যাবের মতো একটি খুনি বাহিনী ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে দমন করান এবং জনগণকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন।’

রিজভী আরও বলেন, ‘এই সব বাহিনী দিয়েই ক্ষমতাসীনরা আমাদের জনসমাজ থেকে গণতন্ত্র, সহনশীলতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়-বিচার, ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ সবকিছুকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। আর এ কারণেই জঙ্গিবাদ নামক একটি নতুন উপদ্রবের উপসর্গ সারাজাতিকে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত করে তুলেছে।’

রিজভী বলেন, উপরন্তু চুক্তি ছাড়াই ভারতের পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকদিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালুর প্রস্তাব তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মেনে নিয়ে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই সুযোগ নিয়ে স্থায়ীভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু রেখেছে, ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে রুক্ষ ও মরুময় অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। অতি নতজানু হওয়ার কারণেই দিল্লির মতলব টের পায়নি তৎকালীন আওয়ামী সরকার।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে বলে দুদেশের সরকারি মহল থেকে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে। যদি আকাশছোঁয়া সম্পর্কই থাকে তবে এতো তড়িঘড়ি করে চুক্তি কেন? ভারতের নীতিনির্ধারকরা তো খুশী থাকবেনই, কারণ বাংলাদেশ থেকে না চাইতেই অনেক কিছু পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছিলেন। সেই সময় তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য প্রায় ৫০টির মতো চুক্তি করেছিলেন। অপ্রকাশ্য চুক্তিগুলির বিষয়ে এখনও জনগণ কিছুই জানতে পারেনি। সীমান্ত সমস্য সমাধানের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এর বিনিময়ে যে, বাংলাদেশের ভূখ-কেই একরকম ইজারা দেয়া হয়েছে, যেমন-নামমাত্র মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বহুমূখী ট্রানজিটের নামে করিডোরের সুবিধা দেয়া হয়েছে। অবকাঠামো না থাকলেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাবে ভারত।

তিনি আরো বলেন, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ’র হাতে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশি নাগরিক খুন হচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যেও বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে ভারত বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া কোন প্রতিরক্ষা চুক্তি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাদেশের জনগণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল হতে দেবে না। বাংলাদেশের দু’একজন লোক ভারতে চাকরি করতে পারে, কিন্তু জনগণ একাত্তরের মতোই তাদের বীরত্ত্ব দিয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মু. রহমতুল্লাহ প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ