বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ত্রুটি সংশোধনে এখনো সাড়া দেয়নি সাড়ে ৫ হাজার পোশাক কারখানা

স্টাফ রিপোর্টার : ত্রুটি সংশোধনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক কারখানা। ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৭ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার বিভিন্ন ত্রুটি সংশোধনের আল্টিমেটাম দেয় ক্রেতা জোট। 

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রানা প্লাজার ঐ ঘটনা বৃহৎ শিল্প বিপর্যয়ের ঘটনা ছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে মূল্যায়নের মাধ্যমে কারখানার মানোন্নয়ন কর্মসূচির শুরু হয়, যা এখনো চলমান। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে সাড়ে তিন হাজার পোশাক কারখানা। কিন্তু পোশাক খাতের সংযোগ শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠা বস্ত্র খাতের প্রতষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই রফতানিমুখী হলেও সেগুলো এখনো এ মানোন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় আসেনি। এখনো এ খাতের সাড়ে পাঁচ হাজার কারখানা মানোন্নয়ন কর্মসূচির বাইরে রয়েছে।

এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক দুই উদ্যোগে পরিদর্শনের মাধ্যমে দেশের পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এর একটি পরিচালনা করছে ইউরোপীয় ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি। অন্য কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছে উত্তর আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি। এছাড়া জাতীয় উদ্যোগে আইএলওর কারিগরি সহায়তায় মূল্যায়ন করছে সরকার। এ তিন উদ্যোগের আওতাভুক্ত কারখানা আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার।

সূত্র আরো জানায়, বস্ত্র পরিদপ্তরের আওতাভুক্ত এ কারখানাগুলোর অধিকাংশই রফতানিমুখী। বস্ত্র পরিদপ্তরের আওতাভুক্ত দেশের মোট ১০টি অঞ্চলে কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৪০টি। এর মধ্যে রয়েছে মানোন্নয়নের আওতাভুক্ত পোশাক খাতের সাড়ে তিন হাজার কারখানাও। এ হিসাবে যেকোনো ধরনের মানোন্নয়ন কর্মসূচির বাইরে রয়েছে পরিদপ্তরের আওতাভুক্ত মোট ৫ হাজার ৫৪০টি কারখানা।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শক অতিরিক্ত সচিব মো. সামছুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, মূল্যায়ন কর্মসূচির আওতায় নেই, এমন অনেক কারখানা রয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী প্রায় এক হাজার কারখানা এখনো এ কর্মসূচির বাইরে। এর বাইরে আরো কারখানা থাকতে পারে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের কারখানাগুলোকে কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

ডিআইএফইর হিসাবে মূল্যায়ন কর্মসূচির বাইরে থাকা প্রায় এক হাজার কারখানার সবই পোশাক খাতের। সাব-কন্ট্র্যাক্ট পদ্ধতিতেই এসব কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ কারখানাগুলোকেই মানোন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে ভাবছে সরকার। এক্ষেত্রে একাধিক প্রকল্প পরিচালনার বদলে রফতানিমুখী সব কারখানা, বিশেষত বস্ত্র ও পোশাক-সংশ্লিষ্ট সব কারখানাকে একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বস্ত্র ও পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট মোট সাতটি সংগঠনের সদস্য কারখানা বস্ত্র পরিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ, বিএলএমইএ, বিজিএপিএমইএ ও বিএসটিএমপিআইএ। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ৪ হাজার ৬৭০টি। এছাড়া বিকেএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫০০, বিটিএমএর ১ হাজার ৪৩০, বিটিটিএলএমইএর ৮২, বিএলএমইএর ৫৭, বিজিএপিএমইএর ৮৫৩ ও বিএসটিএমপিআইএর ৪৪৮। এর মধ্যে পোশাক খাতের প্রায় এক হাজার কারখানাসহ অন্য খাতভুক্ত কারখানাগুলো মানোন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

এ বিষয়ে বস্ত্র পরিদপ্তরের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, দেশের রফতানিমুখী বস্ত্র ও পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট শতভাগ কারখানা মানোন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নেই এটা ঠিক। তবে এসব কারখানার নিবন্ধনের সময় থেকেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সচেতন অবস্থান নিচ্ছে। কমপ্লায়েন্ট না হলে কাউকে নিবন্ধন না দিলেই মানোন্নয়নের জন্য পৃথক কর্মসূচির প্রয়োজন পড়ছে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ