ঐশীর আপিলের রায় যে কোনো দিন

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডে পাওয়া তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে যেকোনো দিন রায় দিবেন হাইকোর্ট।
গতকাল রোববার বিকেলে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।
আদালতে ঐশী রহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আফজাল এইচ খান। সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী এটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম।
এ বিষয়ে জহিরুল হক জহির বলেন, গত ১২ মার্চ ঐশীর আপিল ও ডেথ রেফারেন্স এর শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে হাইকোর্টে হাজির করা হয়। ওই দিন আদালতে হাজির করার পর খাস কামরায় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ওই দিন আদালত বলেন, একটি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চিকিৎসা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐশী রহমান হত্যার সময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন এবং বংশগতভাবে তারা মানসিক রোগী। তার দাদি, চাচারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। সেই চিকিৎসা প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করতে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করে।
২০১৫ সালের ১২ নবেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। রায়ের এক সপ্তাহ পর বিচারিক আদালত থেকে রায়ের কপি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌছে। পরে ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিল গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায়ে ঐশীর মৃত্যদণ্ডের পাশাপাশি তাকে আশ্রয় দেয়ায় তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর হত্যাকান্ডে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি। এ মামলায় ঐশীদের বাসার শিশু গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। স্ত্রী, দুই সন্তান ও শিশু গৃহকর্মীকে নিয়ে মালিবাগের চামেলীবাগের এক ফ্ল্যাটে থাকতেন পুলিশের বিশেষ শাখার (রাজনৈতিক) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, আগের রাতে কোনো এক সময়ে কফির সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ঐশী। পরদিন সকালে সাত বছর বয়সি ছোট ভাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ঐশী। পরে ভাইকে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠিয়ে একদিন পর গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন এই কিশোরী। পরে তার বক্তব্যের সূত্র ধরেই রনি ও জনিকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাতে বলা হয়, বাবা-মাকে ঐশীই হত্যা করে; আর অন্যরা তাকে সহযোগিতা করে।