প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডানকে হারাল আবাহনী
স্পোর্টস রিপোর্টার : প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে জয় পেয়েছে আবাহনী, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ ও প্রাইম দোলেশ্বর। আবাহনী ২৭ রানে হারিয়েছে মোহামেডানকে। রূপগঞ্জ ২৭ রানে খেলাঘরকে আর প্রাইম দোলেশ্বর ১১৯ রানে হারিয়েছে ভিক্টোরিয়াকে। বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে জয় পেয়েছে আবাহনী। রান উৎসবের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্ধী মোহামেডানকে ২৭ রানে হারাল আবাহনী। ঢাকা লিগে আট ম্যাচে আবাহনীর এটা ষষ্ঠ জয়। আর মোহামেডানের এটি তৃতীয় হার। টস জিতে ৫ উইকেটে ৩৬৬ রান করে আবাহনী। জবাবে ৯ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলতে পারে মোহামেডান। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর শতকে বিশাল রান গড়া আবাহনী হারতেই বসেছিল। রকিবুল হাসানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে জয়ের আশা জাগানো মোহামেডানকে থামিয়েছেন মানান শর্মা। ফলে আবাহনী জয় পায় ২৭ রানে। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোহামেডানের রকিবুল হাসান। বিশাল টার্গেট সামনে নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি মোহামেডানের। নবম ওভারে ৩৮ রানের মধ্যে ফিরে যান টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান। তখন থেকেই শুরু হয় রকিবুলের লড়াই। চারিথ আসালঙ্কার কাছ থেকে দারুণ সঙ্গ পেয়েছেন ম্যাচ সেরা রকিবুল। ১২৬ বলে দুই জনে গড়েছেন ১৭৫ রানের জুটি। ৬০ বলে ৮টি চারে ৬৩ রান করা আসালঙ্কাকে বিদায় করে আবাহনীকে ম্যাচে ফেরান মানান। এরপর আর কোনো ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাননি রকিবুল। ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকে তার কাজ। জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে দরকার দাঁড়ায় ৯৯ রান, ঠিক এই রানই নিজেদের শেষ ১০ ওভারে তুলেছিল আবাহনী। শেষের দিকে নিয়মিত উইকেট হারানোয় পেরে উঠেনি মোহামেডান। শেষ ওভারে গিয়ে থামে রকিবুলের লড়াই। তার ১৯০ রানের ইনিংসটি প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আবাহনীর সেরা বোলার মানান। প্রথম চার ওভারে ৪০ রান দেওয়া অনিক শেষ ৬ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। এর আগে আবাহনীকে ১৬ ওভার স্থায়ী ১০৩ রানের উদ্বোধনী দারুণ সূচনা এনে দেন লিটন-সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুলের সঙ্গে ১০৯ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন লিটন। এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ফেরেন ১৩৫ রান করে। তার ১০ বলের ইনিংসটি গড়া ১৫টি চার আর দুটি ছক্কায়। শুরুতে এক-দুই রান নিয়ে লিটনকে সঙ্গ দিয়ে যাওয়া নাজমুল মোহামেডানের বোলারদের ওপর চড়াও হন ৪০ ওভারের পর। চলতি আসরে দ্বিতীয় শতক পাওয়া নাজমুল ফিরেন ১১০ রান করে। তার ১০০ বলের ইনিংসটি ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় গড়া। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ। শেষটায় আবাহনীর রান সাড়ে তিনশ ছাড়ানোয় বড় অবদান রয়েছে শুভাগত হোম চৌধুরীর। ২৭ বলে তিনটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। মোহামেডানের তাইজুল ইসলাম ৩ উইকেট নেন ৫৭ রানে। অন্য বোলারদের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাননি বাঁহাতি এই স্পিনার। এই ম্যচ দিয়েই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন রকিবুল হাসান। গতকাল তিনি করেছেন ১৯০ রান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের লংগার ভার্সনে বাংলাদেশের একমাত্র ত্রিশতক আছে রকিবুলের। খেলেছিলেন অপরাজিত ৩১৩ রানের ইনিংস। ক্রিকেটের দুটি সংস্করণে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড এখন তার অধিকারে। গতকাল ১৩৮ বলের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ১৭টি চার আর ১০টি ছক্কা। বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ১০৮ রান। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১১টি ছক্কার রেকর্ড মাশরাফি বিন মুর্তজার। অল্পের জন্য সেই রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেননি রকিবুল। ২০১১ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষবার খেলা রকিবুলের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এটা পঞ্চম শতক। তার আগের সেরা ছিল ১৩৩ রান।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে জয় পেয়েছে লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ। রূপগঞ্জ ২৭ রানে হারিয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সংস্থাকে। আট ম্যাচে এটা তাদের রূপগঞ্জের পঞ্চম জয় আর খলাঘরের পঞ্চম হার। গতকাল টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১ বল বাকি থাকতে ২৩৯ রানে অলআউট হয়ে যায় রূপগঞ্জ। জবাবে ৪৮ ওভার ১ বলে ২১১ রানে গুটিয়ে যায় খেলাঘর। প্রথম নয় ব্যাটসম্যানের আটজনই দুই অঙ্কে গেলেও সংগ্রহটা খুব একটা বড় হয়নি লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। টানা দুই জয় পাওয়া খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সংস্থার বিপক্ষে সেটাকেই যথেষ্ট বানিয়েছেন বোলাররা। ফলে সুপার সিক্সে যাওয়ার লড়াইয়ে থাকা দুই দলের লড়াইয়ে ২৮ রানে জিতেছে রূপগঞ্জ। লক্ষ্য তাড়ায় খেলাঘর প্রথম বলেই হারায় আগের দুই ম্যাচে শতক করা রবিউল ইসলাম রবিকে। যথারীতি প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হন সালাউদ্দিন পাপ্পু। ২৭ বলে ৬টি চার আর দুটি ছক্কায় ফিরেন ৩৮ রান করে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুস সাদাত গড়েন ৬২ রানের জুটি। ম্যাচে এটাই খেলাঘরের সেরা জুটি। বাঁহাতি সাদাত ফিরেন ৫২ রানে। ষষ্ঠ উইকেটে রেজাউল করিমের সঙ্গে ৫১ রানের জুটিতে খেলাঘরের আশা বাঁচিয়ে রাখেন নাজিম উদ্দিন। চারটি চারে ৫৯ রান করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন নাঈম ইসলাম। নাজিমের বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি খেলাঘরের ইনিংস। রূপগঞ্জের নাঈম, মোশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ শরিফ ও রাজা আলি দার নেন দুটি করে উইকেট। এর আগে হাসানুজ্জামানের ঝড়ো ৩৬ রানে ভালো সূচনা পাওয়া রূপগঞ্জ চাপে পড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও ১০৫ রানের মধ্যে ফিরেন প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান। ষষ্ঠ উইকেটে রাজার সঙ্গে ৯৪ রানের জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেন ম্যাচ সেরা ইয়াসির আলী চৌধুরী। ৪৬ রান করে রাজার বিদায়ের পর মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটিতে দলকে আড়াইশর পথে রাখেন তিনি। মাত্র ৫ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ততদূর যেতে পারেনি রূপগঞ্জ। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ইয়াসির চারটি চারে ৬৯ বলে করেন ৫৯ রান। খেলাঘরের তানভির ইসলাম ৩ উইকেট নেন ৫২ রানে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে জয় পেয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর। প্রাইম দোলেশ্বর ১১৯ রানে হারায় ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাবকে। আট ম্যাচ শেষে কোন জয় পায়নি ভিক্টোরিয়া। প্রাইম দোলেশ্বরের জয়ের পথে ব্যাট হাতে প্রথমে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন আবদুল মজিদ। পরে বল হাতে ভিক্টোরিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছেন স্পিনার আরাফাত সানি। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা মজিদ ১১৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পর আরফাত সানি বল হাতে ৫৬ রান দিয়ে পেয়েছেন ৬ উইকেট। এটাই ক্রিকেটে সানির ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। টস জিতে আগে ব্যাটিং করা প্রাইম দোলেশ্বর মজিদের সেঞ্চুরি ও চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার হাফসেঞ্চুরিতে ৩৩৯ রানের বড় স্কোর দাঁড় করায়। মজিদ প্রথমে উইকেটে ইমতিয়াজের সঙ্গে ৭২ রানের জুটি গড়েন। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে গড়েন ৯১ রানের। নাফীস ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন মজিদ। দলের রান ২১৫ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় এই সেঞ্চুরিয়ান। ১১৪ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় তিনি তার ১১৬ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। আর শ্রীলংকান অলরাউন্ডার চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। ভিক্টোরিয়ার বোলারদের মধ্যে মাহবুবুল আলম ও মোহাম্মদ আরাফত দুজনই নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। ৩৪০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভিক্টোরিয়া সানির ঘূর্ণিতে ২৫ বল আগেই ২২০ রানে অলআউট হয়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছেন সাইফুল হায়াত। এছাড়া মঈনুল ইসলাম খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। প্রাইম দোলেশ্বরের বোলারদের মধ্যে সানি ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন। ৫৮ রান খরচায় তিনি ভিক্টোরিয়ার ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন।