রাশিয়া কানেকশন নিয়ে আবারো ট্রাম্প-গণমাধ্যমের দ্বন্দ্ব
অনলাইন ডেস্ক: নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব আর ট্রাম্পের মুসলিম ব্যান নির্বাহী আদেশ নিয়ে আবারো গরম আলোচনা। সিনেটে সাক্ষ্য দিলেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেলি ইয়েটস ও সিআইএ প্রধান জেমস ক্লাপার। ১৯৬০ সাল থেকেই রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে খর্ব করার যে চেষ্টা করে আসছে, এবার পুতিনের নেতৃত্বে তা সফলভাবে করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সিআইএ প্রধান জেমস ক্লাপার। বিস্তারিত মন্তব্য না করলেও ক্লাপার জানিয়েছেন, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন গোয়েন্দা দফতর সম্মিলিতভাবে তথ্য পায় যে রাশিয়া দুটি প্রধান দলের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের তথ্য হ্যাক করেছে।
তারা হিলারির তথ্য গণমাধ্যম আর উইকিলিক্সকে সরবরাহ করলেও রিপাবলিকান দলের তথ্য কোনো এক অজ্ঞাত কারণে গোপন রেখেছিল। এবার সফল হওয়ার পর আরো গভীরভাবে তাদের সাইবার আগ্রাসন এখন সময়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন সাবেক সিআইএ প্রধান।
এদিকে সিনেট শুনানিতে সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে জেনারেল ফ্লিনের ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সিনেট শুনানিতে। জেনারেল ফ্লিন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ফাঁস করছেন এবং তার রাশিয়া সম্পর্কিত যোগাযোগ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে ট্রাম্প প্রশাসনকে জাস্টিস ডিটমেন্ট থেকে জানানো হয়। এরপরও ফ্লিনকে অপসারণের বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিতে ১৮ দিন সময় লেগেছিল। জেনারেল ফ্লিনের শিগগিরই সিনেট কমিটির শুনানিতে হাজির হওয়ার কথা আছে। জেনারেল ফ্লিন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এ শুনানিতে তার না আসার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন, তবে সিনেট কমিটি সেটা আমলে নেয়নি। জেনারেল ফ্লিন ট্রাম্পের নির্বাচনী সহযোগী আর ট্রানজিশন টিমের সদস্য অবস্থায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছিলেন এবং ওবামার আরোপ করা কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করলেও তা অস্বীকার করেন। কিন্তু ক্লাসিফাইড তথ্যে ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের কথোপকথন ফাঁস হয়ে গেলে বিপদে পড়েন ট্রাম্প। পরে জেনারেল ফ্লিনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও তাকে ভালো মানুষ এবং ভুয়া সংবাদের কারণেই তাকে যেতে হয়েছে বলে বক্তব্য রাখেন একাধিকবার।
এদিকে আবারো ট্রাম্পের জয়ে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে কয়েকদিন পর আবারো আলোচনা শুরু হওয়ায় বেশ বিব্রত হোয়াইট হাউস। সিনেটে ওবামা প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার শুনানিতে রাশিয়ার নির্বাচনে প্রভাব আর ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জেনারেল ফ্লিনের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর হোয়াইট হাউস বলছে, ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগ সংক্রান্ত ক্লাসিফাইড তথ্য কারা গণমাধ্যমে দিয়েছিল সেই বিষয়ে শেলি এবং জেমস ক্লাপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।
সাংবাদিকদের কেউ একজন প্রশ্ন করেন, প্রেসিডেন্ট কি মনে করছেন ওবামা প্রশাসনের নিয়োগ করা সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেলি ইয়েটস গণমাধ্যমের কাছে তথ্য ফাঁস করেছিল ফ্লি’র ব্যাপারে? বিব্রত মুখপাত্র শন স্পাইসর বলেন, না তেমনি নয়, তবে ক্লাসিফাইড তথ্য ফাঁস করা যে অপরাধ সেটা বিশ্বাস করেন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম একশ’ দিনের অর্জনের প্রশংসা করে তৈরি বিজ্ঞাপন প্রচার করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় চারটি টিভি চ্যানেল। ‘আমেরিকা ইজ উইনিং’ শীর্ষক এ বিজ্ঞাপনটি প্রথমেই প্রচার করতে অস্বীকৃতি জানায় সিএনএন। পরে এটি প্রত্যাখ্যান করে এনবিসি, এবিসি এবং সিবিএস টিভি চ্যানেলও। বিজ্ঞাপনটিতে এই চ্যানেলগুলোর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সংবাদ পাঠকের মুখের ওপর ’ফেক নিউজ’ বা ‘ভুয়া সংবাদ’ ক্যাপশন সাঁটানো ছবি দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞাপনটিতে প্রেসিডেন্টের কাজের ১০০ দিনে বিভিন্ন সফলতা উল্লেখ করার পাশাপাশি এসব নিয়ে রিপোর্ট না করার জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করা হয়। এতেই চটেছে টিভি চ্যানেলগুলো।
এক বিবৃতিতে নিজ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সিএনএন লিখেছে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম ভুয়া নয়, বরং এ বিজ্ঞাপনই মিথ্যা। ওই গ্রাফিক্স চিত্রটি সরিয়ে নেওয়া হলে বিজ্ঞাপনটি নিতে তারা প্রস্তুত থাকবে বলে জানায় সিএনএন। এনবিসি চ্যানেলও বিজ্ঞাপনটি নেওয়ার ব্যাপারে একই শর্ত দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা কনডোলিসা রাইস বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে আয়ত্ত করতে পারছেন না বলেই ছটফটে আচারণ করছেন। তার গণমাধ্যমকে দোষারোপ সেই আচরণের প্রতিফলন বলে মনে করেন কনডোলিসা রাইচ। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনডোলিসা রাইস বলেন, তার সরকার পরিচালনায় সবদিক খারাপ নয়, তবে সিস্টেমের সাথে আত্মস্থ হতে সময় লাগবে।