শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় বিক্ষুব্ধ জনতার সড়ক অবরোধ ট্রাক চাপায় স্কুলছাত্র বাবলু নিহত

খুলনা অফিস : খুলনায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সোনালী জুটমিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু (১৪) নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নগরীর ফুলবাড়িগেট সংলগ্ন জনতা সিনেমা হলের সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত বাবলুর পিতা মো. ফজলু সরদার সোনালী জুট মিলের শ্রমিক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্র বাবলু সকালে বাইসাইকেলযোগে ফুলবাড়িগেট এলাকায় প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। সে জনতা সিনেমা হলের সামনে পৌঁছলে খুলনা-যশোর মহাসড়কে যশোরগামী একটি ট্রাক (ঝিনাইদহ-ট-১১-১৪৩৭) তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
খানজাহান আলী থানার ওসি আশরাফুল আলম বলেন, স্কুল ছাত্র নিহতের প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা ও স্কুলটির শিক্ষার্থীরা খুলনা-যশোর মহাসড়ক সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে  সরিয়ে দেয়। ঘাতক ট্রাক চালককে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
ভিক্ষুকদের আনাগোনা বাড়ছে
খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ কাজে আসছে না। জেলা প্রশাসন কর্তৃক খুলনা জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও গোটা নগরীতেই ভিক্ষুকদের আনাগোনা অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিকে স্বাগত জানালেও আগের মতই ভিক্ষুকদের আনাগোনা থাকায় বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের দাবি জেলা প্রশাসনের নজরদারী আরো বাড়াতে হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান খুলনা জেলায় ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলেন, মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪শ’ ৯৭ জন ভিক্ষুক সনাক্ত করা হয়েছে। এমধ্যে ৩ হাজার ৪শ’ ৬৩ জন ভিক্ষুককে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও রেশনিং এর আতওতায় পুনর্বাসিত করা হয়েছে। বাকী ৩০ জনের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন এবং ২৭ জন উপকরণ সামগ্রী নিতে আসেনি। ভিক্ষুক মুক্ত কর্মসূচি ফান্ডে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক দিনের বেতন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, এনজিও ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪শ’ ৫৭ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। যা থেকে ৭২ লাখ এক হাজার ৫শ’ ৮৫ টাকা পুনর্বাসন কাজে ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ ৪১ হাজার ৮শ’ ৯৯ টাকা দিয়ে পরবর্তীতে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। সরেজমিন নিউমার্কেট ও তার আশপাশ এলাকাতে ভিক্ষুকদের চোখে পড়ে। প্রায় ৫০-৬০ জন ভিক্ষুক সাধারণ মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিক্ষা নিতে ভির করে। এদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণকারীরা ও রয়েছে। এরা জেলা প্রশাসনের সাহায্যকে যৎসামান্য দাবী করেছে। অন্যরা ভিক্ষাকেই আদর্শ পেশা বলে মনে করেন।
নিউমার্কেট শাড়ী বিতানের মালিক মোশাররফ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসন খুবই একটা ভাল উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ কি? যারা ভিক্ষা করবে তাদের দমিয়ে রাখা যাবে কি। সপ্তাহের প্রতি সোমবারই নিউমার্কেটে ভিক্ষুকদের ভির আগে যেমন ছিল এখনই তেমন আছে। জেলা প্রশাসন নিয়মিত নজরদারী করলে এমন পরিস্থিতি থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
তানজিলা আক্তার মিম তার মায়ের সাথে এসেছেন নিউমার্কেটে। তাদের ঘিরে রয়েছে ৫-৬ জন ভিক্ষুক। একজনকে ভিক্ষা দিতেই তাদের ঘিরে ধরল বাকী ভিক্ষুকরা। সকলকেই ভিক্ষা দিতে হবে। এমন অবস্থায় বিব্রত হয়ে তারা একটি খাবারে দোকানে ঢুকে পড়ে। মিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দেখেন একসাথে কয়জনকে ভিক্ষা দেব? জেলা প্রশাসন ভিক্ষুক মুক্ত করার কার্যক্রম চালিয়ে তো কোন কাজ হচ্ছে না।
পাইকগাছা শাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত লোকমান ঢালীর স্ত্রী মমতাজ বেগম (৬০), ফুলবাড়িগেট এলাকার রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬২), খালিশপুর সেনহাটী এলাকার মোজাম্মেল মুন্সীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬৫), রেল স্টেশন বস্তির বাসিন্দা ও আব্দুস সোমেদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, তেলীগাতি বরইতলা এলাকার বাসিন্দা ও সাজ্জাদ আলীর স্ত্রী হাজেরা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন ভিক্ষুককে নিউমার্কেটে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, জেলা প্রশাসনের পুনর্বাসন কর্মসূচিতে তারা সন্তুষ্ট নন। জেলা প্রশাসন থেকে তাদের যে অনুদান দেওয়া হয়েছে তাতে তাদের অভাব দুর হয় না। তাই তারা পুনরায় ভিক্ষা করতে নেমেছেন। তবে তারা কোন কর্ম করতে রাজি নন। তাদের দাবী তারা সকলেই অসুস্থ। আর অসুস্থ অবস্থায় তারা কাজ করতে পারবেন না।
মমতাজ বেগম নামে একজন ভিক্ষুক জানান, জেলা প্রশাসনে আমি নাম দিয়েছি তবে কোন সাহায্য পায়নি। তাই ভিক্ষা করতে নেমেছি।
হাজেরা খাতুন নামে অপর এক ভিক্ষুক জানান, আমাকে ১২ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। এতে আমি আর আমার অসুস্থ স্বামীর ভরণপোষন হয় না। শুধু ১২ কেজি চাল দিয়ে কি চলা যায়।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ বলেছেন, গত বছরের ১ আগস্ট প্রথমবারের মত খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুক মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সহযোগিতায় খুলনা বিভাগে ভিক্ষুক মুক্ত কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এই পূনর্বাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং আগামী ২০ মে’র মধ্যে খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুক মুক্ত করা সম্ভব হবে। বিভাগীয় কমিশনার ভিক্ষুককে ভিক্ষা না দেয়ার জন্য এবং যাকাত বা দানের টাকা ভিক্ষুক পূনর্বাসন ফান্ডে প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি এ সময় পেশাদার বা ব্যবসায়ী ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, আমরা জরিপ চালিয়ে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের সবধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। তারপরও কাউকে ভিক্ষা করতে দেখা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ