চুয়াডাঙ্গায় চলছে অনুমোদনহীন অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্টের রমরমা ব্যবসা
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা: চুয়াডাঙ্গার ঔষধের বাজারে চলছে বৈধ কতৃপক্ষের অনুমোদনহীন অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্টের রমরমা ব্যবসা। এক শ্রেণির অসাধু
চিকিতসকের সহযোগিতায় ফুড সাপ্লিমেন্টে কোম্পানীর ব্যবসা জমে উঠছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার সবক’টি উপজেলা ও পৌর শহরের ফার্মেসীগুলোতে অনুমোদহীন ও অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট এখন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। ফুড সাপ্লিমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে অনৈতিক চুক্তিতে এক শ্রেণির চিকিতসক ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ২/১টি করে ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
চুয়াডাঙ্গা শহর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, দর্শনা, জীবননগর, কার্পাসডাঙ্গা, হিজলগাড়ী বাজার সহ প্রায় জেলার সব বাজারের বিভিন্ন ঔষধের দোকান ও ফার্মেসীতে খোঁজ করে বিভিন্ন ফুড সাপ্লিমেন্ট ঔষধের পাশা পাশি সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ম্যাপকো ফার্মাসিউটিক্যালের এভাগগ্রীন সিরাপ, পিউটন সিরাপ, হামিন ল্যাবরেটরিজের এইচ টোন সিরাপ, ইউএসএ কোম্পানীর ভিটা সাইন পাউডার, ভিসুসিও পাউডার, মেডিমেট ফার্মাসিউটিক্যালের লাক্সাট পাউডার, একেবারেই নামবিহীন
কোম্পানীর ইপি কোর, ইপি রোল, রাসনা ল্যাবরেটরিজের আর ভি ২০, জিঙ্ক রাজ (জিঙ্ক সালফেট), ওয়েলকাম ইন্টারন্যাশনালের ক্লাসিক ই, ক্লাসিক গোল্ড, ক্লাসিক প্লাস, ফুলফিল ল্যাবরেটরিজের মারভিস, এ্যানাভিস, জোরাক, লিও ইন্টারন্যাশনালের কারডো ৩, প্রজ্ঞা ল্যাবরেটরিজের সেভ বলারিস্ট, সানপে, বায়ো ফার্মার বুটাম্যাক্স, এ্যালো, বায়োভিট। রাসনার আরভি-২০ নামক ফুড সাপ্লিমেন্টটি এখন সকল ঔষধের দোকানে দেদারচে বিক্রি হচ্ছে। এটি মোটা অংকের সন্মানি দিয়ে ডাক্তারদের প্রভাবিত করেই বিশেষকরে মহিলা রোগিদের ব্যবস্থাপত্রে অবধারিতভাবে লেখানো হয়ে থাকে বলে অঅিযোগ রয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, ৩০টি ট্যাবলেটের একটি বোতল ১ শ ২০টাকায় কিনে সাড়ে ৫ শ টাকায় বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ প্রায় ৫ গুণ অধিক মূল্যে বিক্রি করা হয়। এছাড়া বায়োফার্মার মোটাতাজাকরণের এ্যালো নামের সিরাপ ১ শ টাকায় কিনে ফার্মেসি মালিকরা সাড়ে ৪ শ টাকায় বিক্রি করে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বলেছেন, এ্যালো ধরনের মোটাতাজাকরণের সিরাপ ডেক্সামেথোসন মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এতে রোগী সাময়িকভাবে বেশি ক্ষুধা অনুভব করে, বেশি খায়। এদের শরীরে অতিরিক্ত রস জমে সুস্বাস্থ্য জানান দেয়। অবশ্য কয়েক মাসের ভেতরেই রোগীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এবং তিনি বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
একাধিক ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ সকল ফুড সাপ্লিমেন্টে কোন কাজই হয়না। তাছাড়া ভিটামিন ও ক্যালশিয়াম নামে অনেক ওষুধ রয়েছে দোকানের র্যাকভর্তি। যেগুলো অসাধুচক্র নামধারি ডাক্তারদের যোগসাজসে ঢাকার মিডফোর্ট রোডের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বসে আটা ময়দা দিয়ে তৈরী করে কৌটায় ঢুকিয়ে নানান দেশের লেভেল লাগিয়ে সিল মেরে দীর্ঘ মেয়াদ বসিয়ে বাজারজাত করে থাকে। এসব ওষুধ আপতদৃষ্টিতে চিনবার উপায় নেই। এসকল ফুড সাপ্লি
মেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে এক শ্রেণির ডাক্তার বিশেষ চুক্তিতে ওষুধের প্যাকেটের গায়ের দামের অর্ধেকের বেশি কমিশনের লোভে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ওই সব অনুমোদনহীন ফুড সাপ্লিমেন্টের নাম ঢুকিয়ে দেন।
আলমডাঙ্গা পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের ওষুধ ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়া বলেন, ডাক্তাররা যদি ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রিপশন না করে তবে আমরা এগুলো দোকানে উঠাবো কেনো? ফুড সাপ্লিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং এসকল পণ্য প্রেসক্রিপশন করা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হলেও তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে তিনি আরও জানান। এতে প্রকৃত ওষুধ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন মিসেস রওশন আরা জানান, আমরা ফুড সাপ্লিমেন্টের নাম বলতে বলিনা, প্রাকৃতিক খাবারের কথা রোগীদেরকে বলি। এ ব্যাপারে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।