শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতা না হলে আন্দোলন তীব্রতর হবে

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে বিরোধী জোটের সাথে সমঝোতা না হলে আন্দোলন তীব্রতর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেন, দেশে ভবিষ্যতে একতরফা কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবেনা। সরকার যদি নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় না আসে তাহলে আন্দোলন তীব্রতর করা হবে। এদিকে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছে বলে মনে করে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ও অপর একটি আলাপচারিতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী একথা বলেন। 

গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) প্রথমেই বললো, বিএনপির ভিশন ২০৩০ অন্তঃসার শূন্য। মানে ভিশন’টা পড়ার আগেই নাকোচ করে দিলেন তারা। আর এখন বলছেন, বিএনপির ভিশনের মধ্যে অনেক কিছু আছে যেগুলো প্রথমে আমরাই (আ’লীগ) করেছি, যা তারা এখন অনুসরণ করেছে।

মওদুদ আহমেদ বলেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ একটা মাইলফলক। একটা সনদ। এই ভিশনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে বিএনপি’র একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যা এই ভিশনে উল্লেখ করা হয় নাই। এবং ২০৩০ সালে আমরা (বিএনপি) বাংলাদেশকে কী রকম দেখতে চাই সে ব্যাপারেও ভিশনে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভিশন বাস্তবায়নে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ। এটি দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। ফলে আজকে অনেকে হিংসা করছে, ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন।

 সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মনে করে ভিশন ২০৩০ প্রকাশে দেশের আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দেশের মানুষ জানতে চায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী রকম ব্যবহার করবে? বিএনপি কি আওয়ামী লীগের মতো ব্যবহার করবে? স্পষ্ট করে বলছি- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের মতো ব্যবহার করবে না। কারণ আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চায় আর বিএনপি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এবং ভিশন ২০৩০ তে আমরাও (বিএনপি) বলেছি- সংসদকে একটি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাবো। প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না। বিরোধীদলকে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য সাহায্য করবো, তাদেরকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেবো, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেবো।

দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় মন্তব্য করে বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, দেশের মানুষ এই সরকারের পরিবর্তন দেখতে চায়। এবং দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনের মাধ্যমেই সেই পরিবর্তন ঘটাবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং নিশ্চয়ই ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। মওদুদ বলেন, বিরোধীদলকে আজ জনসভা করতে দেওয়া হয় না। জনসভা করার অনুমতি দেয়া হয় না। আমাদের নেতাকর্মীরা বাসা-বাড়িতে ঘুমাতে পারেন না। প্রশ্ন জাগে- জেল-জুলুম-নির্যাতন করে এই সরকার আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে?

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে যে সরকার আছে তার কোনও জবাবদিহিতা নেই। আর জবাবদিহিতার অভাবে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি চলছে বেপরোয়া মাত্রায়। যে যে রকমের ইচ্ছা সে রকমের দুর্নীতি করছে। প্রতিদিন সামাজিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। তাই একটি জবাবদিহিতামূলক এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় আগামীতে এই দেশে একদলীয় নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনও একদলীয় নির্বাচন হবে না।

মওদুদ বলেন, আমরা আন্দোলন করবো এবং নির্বাচন করবো। যদি তারা (সরকার) সমঝোতায় না আসেন আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। আমরা নির্বাচনকালীন সময়ে এমন সরকার চাই- যার অধীনে মানুষ নির্বিঘেœ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গ তুলে ধরে মওদুদ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের যত শক্তি দিয়ে ভারতের সাথে পানি সমস্যা সমাধানে আলোচনা করা উচিত ছিল তা করেননি। তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতের স্বার্থে সবকিছুই দিয়ে এসেছেন, বিনিময়ে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পানি সমস্যা সমাধান করতে পারেননি। ব্যর্থতা ছাড়া দেশের জন্য কিছু অর্জন করতে পারেননি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী সিরাজ, মশিউর রহমান জাদু মিয়ার মেয়ে রিতা রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা আলী ঈমাম, আক্তার হোসেন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাবলু ও প্রচার সম্পাদক হান্নান আহমেদ খান বাবলু প্রমুখ।

এদিকে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের ভিশন, পরিকল্পনা থাকতেই পারে কিন্তু তার আগেই তারা (আওয়ামী লীগ) এটাকে ধাপ্পাবাজি, ভাওতাবাজি বলছে। এসব কথা বলে তারা নিজেদেরকে নিজেরাই বোকা বানিয়েছে। আসলে তারা এই ভিশন নিয়ে নার্ভাসনেস ফিল করছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে আমির খসরু বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কিভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের উন্নয়ন করা যায় সেগুলো আমাদের ভিশনে রয়েছে। দয়া করে ভিশনটি পড়েন অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আপনাদের চোখ তো সব সময় পেছনে থাকে। বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি রাষ্ট্র গণতন্ত্র ছাড়া চলতে পারে না। সেই গণতন্ত্রের জন্য আমরা যখন স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে আন্দোলন করি তখন আমরা জাতি হিসেবে অপমানিত হই। আজকের বাংলাদেশ যে উন্নয়নে এসে পৌঁছেছে তা বিএনপির সংস্কারের কারণে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা সব কিছুই অনুপস্থিত। তার জন্য অনতিবিলম্বে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ